মাঘের প্রথম দিন থেকে মেলায় অংশ নিতে তাদের প্রস্তুতি শুরু হয় অগ্রহায়ণ থেকেই, বলেন গাছিরা।
Published : 15 Jan 2025, 11:58 PM
যশোরের চৌগাছা উপজেলায় শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘গুড় মেলা’। ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’ এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মেলার আয়োজন করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার বেলা ১১টায় চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন ডিসি আজাহারুল ইসলাম। এতে নিজেদের তৈরি খেজুর গুড় ও পাটালি নিয়ে স্বতঃষ্ফূর্ত অংশ নিয়েছেন গাছিরা।
ডিসি বলেন, যশোরের খেজুর রস ও গুড়ের সুখ্যাতি সুদীর্ঘ কালের। রস ও গুড় উৎপাদনের অন্যতম স্থান জেলার চৌগাছা উপজেলা। এক সময় যশোরের খেজুর গুড়ের চিনির খুব নাম-ডাক ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ ভাগ থেকে খেজুর গুড়ের চিনির জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে যশোর। ১৮৫১ সালে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ইংরেজরা খেজুর গুড়ের কারখানা স্থাপন করে। এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে ২০২২ সাল থেকে চৌগাছায় শুরু হয় খেজুর গুড়ের মেলা।
তিনি জানান, বাংলাদেশের একমাত্র যশোর, যেখানে একটি মাত্র পণ্য নিয়ে মেলা হয়। আর কোনো জেলায় এ রকম হয় না। যশোরের প্রাচীন ইতিহাসে এ জেলার খেজুর ও বাবলা গাছের আধিক্য নিয়ে বর্ণনা আছে। এক পর্যায়ে নানা কারণে খেজুর ও বাবলা গাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। সে অবস্থায় খেজুর গাছ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন আবার চোখে পড়ছে খেজুর গাছ।
প্রথম দিনেই শতাধিক গাছির অংশ গ্রহণে জমে উঠেছে মেলা।”
গাছিরা বলেন, মাঘের এক তারিখ মেলায় অংশ নিতে তাদের প্রস্তুতি শুরু হয় অগ্রহায়ণ থেকেই। নির্ভেজাল গুড় ও পাটালি নিয়ে আসেন গাছিরা। তাই বিক্রিও শুরু হয় মেলার প্রথম দিন থেকেই।
উপজেলার বাগারদাড়ি গ্রামের গাছি লিয়াকত আলী বলেন, তিনি মেলায় ১৯ কেজি গুড় ও ছয় কেজি পাটালি নিয়ে এসেছেন।
রাজাপুর গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ২৫ কেজি পাটালি ও ১৫ কেজি গুড় নিয়ে এসেছেন মেলায়। যার অর্ধেক দুপুর ১২টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে।
মেলায় একমাত্র নারী বিক্রেতা আরতি রাণী। উপজেলার মাধবপুর গ্রাম থেকে গুড় ও পাটালি নিয়ে আসা আরতি বলেন, অগ্রহায়ণ মাস থেকেই তারা মেলার জন্য গুড়-পাটালি তৈরি প্রস্তুতি নেন।
এবার মেলার জন্য তিনি ১০০ কেজি গুড় ও ৪০ কেজি পাটালি তৈরি করেছেন।
বিক্রেতারা বলেন, তারা পাটালি প্রতি কেজি সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও গুড় সাড়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে নলেন গুড়ের দাম বেশি। আব্দুল গাজী নামে হায়াতপুর গ্রামের এক গাছি নলেন গুড়ের পাটালি দাম চাইলেন এক হাজার টাকা কেজি।
গুড়-পাটালির পাশাপাশি কয়েক জন নারী গুড় দিয়ে পিঠা তৈরি করে আনেন মেলায় বিক্রির জন্য। তাদের মধ্যে কাবিলপুর গ্রামের রিমা খাতুন বলেন, “এই (খেজুর) গুড় দিয়ে যে পিঠা তৈরি হয়, আমরা তা-ই নিয়ে এসেছি।”
প্রতি বছরই মেলার কলেবর বাড়ছে, ফলে চৌগাছা তথা যশোরের জন্য সুখ্যাতি তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুম্মিতা সাহা। তিনি বলেন, “যশোরের যশ খেজুরের রস’ স্লোগানের যথাযথতা ধরে যশোরের গাছিদের প্রাণান্ত চেষ্টার প্রতিফলন এ মেলার সফলতা।”