ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 16 Jul 2024, 07:45 PM
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার সংস্কার এবং সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের-বাকৃবি শিক্ষার্থীরা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ করে আন্দোলন করছে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন আটকে দেন তারা।
দুপুর ৩টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মুক্তমঞ্চে এসে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। এরপর মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল কামাল-রনজিৎ (কেআর) মার্কেট হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে রেলপথ অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীরা সকল গ্রেডে (৯ম-২০তম) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল এবং সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা সীমিত করার দাবিতে সংসদে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করে। এ ছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানায়।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন। তবে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করেছিলো বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী।
আন্দোলনকারীরা রেললাইন অবরোধ করতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রেললাইন থেকে সরে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন আটকে দেন এবং সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মালিহা মাশরাত বলেন, “আজকের যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের ভাই-বোনদের রক্ত ঝরছে। এ কেমন স্বাধীনতা, কেমন বাংলাদেশ? যৌক্তিক দাবিতে রক্ত ঝরায় দেশের পতাকার সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর যদি কোনো শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরে, তবে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে দাঁড়াবো।”
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ওয়াহিদা আঞ্জুম রিস্তা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য হিসেবে গর্বিত ছিলাম, কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে যে আমার ভাইদের রক্ত ঝরছে। আমি আমার ভাই-বোনদের অধিকার হরণ করে কোটা চাই না। আমি চাই এর একটা সমাধান হোক, কোটা সংস্কার হোক।”
এ দিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে নগরীর টাউন হলে জড়ো হতে থাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাস্তা অবরোধ করে আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী নানা স্লোগান দেন। এ সময় যানজটে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, “যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে আছি থাকব। ছাত্রলীগের হামলায় আহতদের বিচার ও কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। আমাদের ওপর আঘাত আসলে প্রতিহত করা হবে।”
মহানগরের সড়কে চলাচলকারী হায়দার আলী বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কিছুটা ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একটু ঘুরে বিকল্প রোড দিয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়।”
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড় হয়ে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় রাস্তা আটকে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।