নারায়ণগঞ্জে ‘নোংরা রাজনীতি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি সরকারের কাছে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করেন।
শুক্রবার বিকালে ‘ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার দশ বছর’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন।
ত্বকীর স্মরণে শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে দেশের ৪৭ জন বরেণ্য শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে ‘চিত্রপটে ত্বকী’ শিরোনামে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
মেয়র আইভী বলেন, “অনেক প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ বাংলাদেশ। এ দেশে আমাদের সন্তান হত্যা হবে, তা আমরা চাই না। একটি দেশে অনেক কিছু হয়। অপরাধ কখনও বেড়ে যায়, কখনও কমে। সরকারের দায়িত্ব, অপরাধ দমন করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া।”
নারায়ণগঞ্জের কতিপয় লোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রচেষ্টা ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন সেলিনা হায়াৎ।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি যেসব অর্জন করছেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাচ্ছেন, সেই প্রচেষ্টা ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কতিপয় লোক। আপনি ভালো করেই তাদের চেনেন ও জানেন। এই আসকারা, সাহস তারা কোত্থেকে পায়? নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স তাদের কে দেয়?”
ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে সিটি মেয়র আরও বলেন, “দশ বছর যাবৎ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ত্বকী হত্যার বিচার চাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ শহরে আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। ত্বকী হত্যার বিচার অবশ্যই হবে। আমি সরকারের কাছে ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
“এই ওসমানীয় সাম্রারাজ্যের হাত থেকে আমরা মুক্তি চাই।”
আইভী আরও বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার বাবাও এ দল করতেন। যতদিন বেঁচে থাকবো আওয়ামী লীগই করব, জয় বাংলা বলব। তবে দলের ভেতরে থেকেও অন্যায়, অবিচারের প্রতিবাদ করব। অন্যায়কারী দলের হোক কিংবা দলের বাইরের হোক।”
শত হুমকির পরও ত্বকী হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন বলে উল্লেখ করেন এই সিটি মেয়র।
তিনি বলেন, “জনতাই আমাদের শক্তি। নারায়ণগঞ্জের মানুষই আমাদের পথ দেখাবে। শহরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষকে নিয়ে এ আন্দোলন আরও বেগবান করতে চাই। শহরবাসীকে জাগাতে চাই, সাহসী করতে চাই।“
অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, ‘চিত্রপটে ত্বকী’ পর্ষদের আহ্বায়ক শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়সহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা ছিলেন।
এর আগে সকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও কড়া বক্তব্য দেন সিটি মেয়র।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি’ হচ্ছে মন্তব্য করে তা বন্ধের আহ্বান জানান।
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, “আগের নিয়মে মানুষ চলে না। মানুষ এখন সব বোঝে। শেষ পর্যন্ত আর কিছু পেল না, আমার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করল। এ ধরনের বড় নেতাদের নোংরা রাজনীতি শোভা পায় না। আপনার মতো নোংরামি করতে পারব না, কিন্তু আপনার নোংরা রাজনীতির জবাব সাহসিকতার সঙ্গে দিতে পারব। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের কথা বলি, উন্নয়ন করতে দেন। এ রকম নোংরামি বরদাশত করা হবে না।”
তিনি বলেন, “এ নারায়ণগঞ্জে ৫০-৬০ বছর ধরে যারা জমিদারি করে আসছে, তাদের জমিদারির অবসান ঘটাতে চাই। ওই সাম্রাজ্যের অবসান ঘটাতে চাই। জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে। আমার কাজ মানুষকে সাহসী করা, শহরবাসীকে জাগিয়ে তোলা। আমি অতন্দ্র প্রহরীর মতো শহরবাসীর পাশে আছি। মানুষের কাতারে আসেন, বিভক্তি বন্ধ করেন। চ্যালা-চামচাদের থামতে বলেন। না থামলে বন্দর, নবীগঞ্জে যেভাবে মানুষ প্রতিহত করেছে সেভাবে নারায়ণগঞ্জ শহরেও হবে।”
দলীয় কার্যালয়ে এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।