Published : 03 Apr 2025, 12:26 PM
“কোর সাফারি পার্কেরর জীবজন্তু দেখতে বাসে উঠে দেখি এসি সচল নেই। পরে জানতে পারি এসি নষ্ট। এ অবস্থায় কিছুদূর চলার পর গরমে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এক সময় আমার শিশুসন্তানও গরমে কান্না শুরু করে। পরে বাসের জানালা খুলে দিলে তার কান্না থামে।
“আবার জানালা দিয়ে কান্নার শব্দ বাইরে গেলে বাঘ-সিংহ কান পেতে শোনে এবং শব্দের উৎস খুঁজে। এটা এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। তখন গরম লাগলেও পর্যকটকরা বাধ্য হয়েই আবার জানালা বন্ধ করে দেয়।” কথাগুলো বলছিলেন সালমা বেগম নামের এক গৃহবধূ।
বুধবার ঈদের তৃতীয় দিন ময়মনসিংহ থেকে শিশু সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যের সঙ্গে গাজীপুরের সাফারি পার্কে বেড়াতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়েন সালমা।
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হিংস্র প্রাণী থাকায় পর্যটকবাহী বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করেই ভ্রমণের নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসি বিকল থাকায় দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
পার্কের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য সাতটি বাসের মধ্যে পাঁচটির এসি বিকল হয়ে আছে। বিকল্প হিসেবে কয়েকটি বাসে ছোট ফ্যান যুক্ত করলেও তা অপর্যাপ্ত। ফলে বাসে চড়ে গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকরা অনেক সময় বাসের জানালা খুলে দিচ্ছেন। তাতে আনন্দ-ভ্রমণের সময়ও চালক-পর্যটকদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কটির কোর সাফারির বাঘ-সিংহ-ভালুক বেষ্টনীতে প্রবেশ করতে রওনা হয়েছে পর্যটকবাহী একটি বাস। বেষ্টনীতে প্রবেশ করার আগেই চালক হ্যান্ড মাইকে দর্শনার্থীদের বাসের জানালার বাইরে হাত বা মাথা বের না করার জন্য সতর্ক করে দিচ্ছেন।
কিন্তু এসি বিকল থাকায় বাসটি চলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে অনেকে বাসের জানালার কাঁচ খুলে দেন। তারা বাস চালকের কথা কর্ণপাত করেনি। বাসটি হিংস্র ওইসব প্রাণীর বেষ্টনীতে ঢুকলেও জানালা বন্ধ করেননি তারা। কয়েকজন পর্যটক আবার খোলা জানালা দিয়ে বাইরে হাত বের করেই ক্যামেরা-মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলছিলেন।
পার্কের টুরিস্ট বাসের এক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর আগে কেনা আটটি বাসের মধ্যে পাঁচটি বাসেরই এসি বিকল। এ ছাড়া একটি বাস গত বছরের ৫ অগাস্টে সন্ত্রাসী হামলায় ভাঙচুরের পর গ্যারেজে পড়ে আছে। এখন সাতটি বাসই চলাচল করছে। কিন্তু এসব বাসের কয়েকটিতে ছোট ফ্যান লাগানো হলেও তা অপর্যাপ্ত। তাই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পর্যটক মাঝে-মধ্যেই বাসের জানালা খুলে ফেলছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির দিনে কোর সাফারি অংশের রাস্তায় ছোট-বড় খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এসব পথে চলতে গিয়ে অনেক সময় গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সামনের বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এসব রাস্তা মোরামত করা না হলে ঝুকি আরো বাড়বে।
টুরিস্ট বাসের এসি নষ্ট থাকায় দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন জামালপুরর সরিষাবাড়ি এলাকা থেকে সাফারি পার্কে ঘুরতে আসা আসমা উল হোসনা ডেইজি নামের আরেক নারী পর্যটক।
তিনি বলছিলেন, “টাকা দিয়ে টিকেট কেটে উৎকণ্ঠা আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আনন্দ ভোগ করতে হয়েছে।”
এ বিষয়ে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “২০১৩ সালে সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় আটটি এসি বাস ও দুটি জিপ দর্শনার্থীদের ঘোরানোর জন্য যুক্ত করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই বাসগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত মেরামত করেই এখন যানগুলো চালাতে হচ্ছে।
“একটি পর্যটক বাস গত বছরের ৫ অগাস্টে সন্ত্রাসী হামলায় ভাঙচুরের পর গ্যারেজে পড়ে আছে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য সাতটি বাসের পাঁচটির এসি বিকল। তবে বিকল্প হিসেবে বাসে ছোট ছোট ফ্যান সংযোজন করা হয়েছে।”
পার্কের এ কর্মকর্তা বলেন, “পার্কের প্রধান আকর্ষণ ‘কোর সাফারি’ এলাকায় চলাচলের রাস্তায় ছোট-বড় খানাখন্দ পর্যটকবাহী বাস চলাচল কিছু সমস্যা হলেও পার্কের রাস্তার কিছু অংশ ইতোপূর্বে সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। বাকি অংশ বরাদ্দ পেলেই মেরামত করা হবে।”
পার্কটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শারমিন আক্তার বলেন, “বিষয়গুলো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম আমাকে জানিয়েছেন। আমিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখনও সরকারি কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় এসি সংযোজন কিংবা নতুন বাস কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই যেসব বাসে এসি নষ্ট সেসব বাসে ছোট ছোট ফ্যান লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এসিসহ রাস্তা সংস্কার ও মেরামত করে দেওয়া হবে।”
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেয়া খান বুধবার দুপুরে গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, “পার্কের ভেতরে কোর সাফারি অংশে যে রাস্তা দিয়ে টুরিস্ট বাস চলাচল করে তার অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানে স্থানে স্থানে খানাখন্দ রয়েছে। এ রাস্তা মেরামত করা জরুরি।”
পর্যটক বাসে এসি না থাকা এবং বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলেও জানান তিনি।