Published : 26 Nov 2024, 12:27 AM
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কয়েকজন সাংবাদিকের নামে বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের নেতারা।
তারা বলছেন, এ ঘটনায় এরই মধ্যে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিরাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে পলাতক থাকায় কেউ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি শামীম আক্তার হোসেন বলেন, “আমরা এই মিথ্যা মামলার নিন্দা জানাচ্ছি।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “মামলার বাদী ইদ্রিছ আলী এক প্রেস ক্লাবের সদস্য ছিলেন; আমরা আরেক প্রেস ক্লাবের। এখানে আমাদের প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের নাম কেন আসামির তালিকায় আসে?”
২০২০ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করে ১৮ নভেম্বর মামলাটি করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাসিন্দা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সদস্য এম ইদ্রিছ আলী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ২০২০ সালের ২১ জুন কলেজ রোডস্থ শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবে বোমার বিস্ফোরণ ও গুলি করেছেন। বাদী ও সাক্ষীরা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন। পরে প্রেস ক্লাব থেকে তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ১০ সাংবাদিকসহ ৫৭ আসামির নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে তারা আটক করেছেন।
মামলায় সাংবাদিকদের মধ্যে আসামিরা হলেন, শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, দৈনিক যুগভেরী পত্রিকার প্রতিনিধি ইমাম হোসেন সোহেল, সাপ্তাহিক শ্রীমঙ্গল বার্তার সম্পাদক মুমিনুল হোসেন সুহেল, সাপ্তাহিক শ্রীমঙ্গল বার্তার বার্তা সম্পাদক মামুন আহমেদ, সাপ্তাহিক চায়ের দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সনেট দেব চৌধুরী, সাপ্তাহিক জয়বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজাদুর রহমান, আরটিভি ও আমাদের সময় এর মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী ভাস্কর হোম, একুশে টেলিভিশন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হৃদয় দাশ শুভ এবং দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি এসকে দাশ সুমন।
বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বলেন, “মামলায় সাংবাদিকদের নামে ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। সবাইকে বিগত সরকারের দোসর হিসেবে ইদ্রিস আলী মামলায় উল্লেখ করেছেন, যা ভিত্তিহীন। শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬-এর ৫ ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করায় ইদ্রিস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি সেটির জবাব দিয়েছিলেন। তার দেওয়া জবাবেও তিনি একটি রাজনৈতিক দলকে (বিএনপি) হল বরাদ্দ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলকে হল বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই। যে কারণে প্রথমে প্রেস ক্লাবের অধিকাংশ কার্যকরি সদস্যদের মতামতে ও সাধারণ সভার মতামতের ভিত্তিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের সামনে গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি একেবারেই অসত্য। মামলায় উল্লেখিত দিন (২১ জুন ২০২০) কেন, এ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের সামনে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলেই এর সত্যতা মিলবে।”
মামলার অন্য আসামি একুশে টেলিভিশন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তী বলেন, “বিএনপি নেতা ইদ্রিছ আলীর ব্যক্তিগত আক্রোশে মিথ্যা মামলার কারণে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এলএলবি (পার্ট ওয়ানের) ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারিনি।”
মামলার আসামি দৈনিক খবরের কাগজের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হৃদয় দাশ শুভ বলেন, “আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার দুই মাসের একটি সন্তান রয়েছে। এই মুহূর্তে তার কাছে থাকতে পারছি না। তাকে একটু দুধ কিনে দিতে পারছি না। আমার ঘরে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। এই মিথ্যা মামলার কারণে আমি ও আমার পরিবার এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছি।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন বলেন, “ওই সময় আমি শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবের কার্যকরি কমিটির কোনো সদস্য ছিলাম না। আমাকে মিথ্যা অভিযোগে মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
দৈনিক বাংলার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এসকে দাশ সুমন বলেন, “অসত্য অভিযোগ দিয়ে শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকদের ওপর মামলা দেওয়ায় আমরা কেউই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। সবাই এলাকা ছাড়া।”
সাপ্তাহিক চায়ের দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সনেট দেব চৌধুরী বলেন, “ওইদিন যে মিছিল হয়েছিল, সেই মিছিল ও প্রেস ক্লাবের সামনে ইদ্রিছ আলীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সভা হয়েছিল সেখানে পুরো ঘটনাই বিভিন্ন ফেইসবুক লাইভে আছে। সেখানে আমরা দেখতে পাই, ইদ্রিছ আলী যে সুদের ব্যবসা করে মানুষকে প্রতারণ করেন এবং চাঁদাবাজি করেন তারা তারই প্রতিবাদ করছেন।
এ ব্যাপারে বাদী এম ইদ্রিছ আলীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।