“সরকারতো একবার এসে আমাদের খোঁজ নিল না।কিছু রেশনের চাল দিলেও তো চলা যেত।”
Published : 06 Nov 2024, 09:21 PM
“সাপ্তাহিক তলবে (বেতন) আমাদের সংসার চলে। চা শ্রমিকদের কোনো সঞ্চয় করার সুযোগ নেই। কয় সপ্তাহ বেতন ছাড়া চলা যায়? প্রায় দুই মাস চলছে বেতন নেই। প্রথম কয়েকদিন দোকান থেকে বাকি নিয়ে খেলেও এখন মিলছে না।”
কথাগুলো বলছিলেন, সরকারের মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক অঞ্জুলী ছত্রী।
বকেয়া বেতনের দাবিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন চা বাগানের শ্রমিকরা বুধবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
শ্রমিকরা জানান, গত নয় সাপ্তাহ ধরে মৌলভীবাজারের সাতটি, হবিগঞ্জের চারটি ও সিলেটের একটিসহ ১২টি চা বাগানে শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও সাপ্তাহিক রেশন বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় ঘরে চাল বা আটার যোগান নেই। চা বাগানের অনেক শ্রমিকের পরিবারে জ্বলছে না উনুন। ক্ষুধার জ্বালায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, “দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ। প্রায় দেড়মাস ধরে শ্রমিকরা পেটে ক্ষুধা নিয়ে কাজ করেছে। এরপর উপায় না পেয়ে গত ২১ অক্টোবর থেকে তারা কাজে যাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বাগানের উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।
“এখন বেতনের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই বাগানে বাগানে আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছে। মিডিয়াতেও আসছে খবর; এরপরও সরকার কেনো ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে না।”
অঞ্জুলী ছত্রী বলছিলেন, “শ্রমিকদের কেউ কেউ কচু সেদ্ধ ও কচুর মোড়া তুলে খাচ্ছেন। অনেকে সন্তাদের মুখেও খাবার তুলে দিতে পারছেন না। তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছেন না।”
শ্রমিক সরলা নায়েক বলেন, “চালটা থাকলেও তো শাক-পাতা তুলেও খাওয়া যায়। বাচ্চাদের মুখে কিছু ভাত তুলে দেওয়া যায়। বেতনই তো দিচ্ছে না। তাই উনুনে হাঁড়ি বসানোও চাল নেই।”
“কই? সরকারের লোকজন তো একবার এসে আমাদের খোঁজ নিল না। আমাদের কিছু কিছু রেশনের চাল দিত তাওতো কয়দিন চলা যেত।”
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, “চা শ্রমিকদের এই সংকটময় মুহূর্তে এখন পর্যন্ত মৌলভীবাজারের কোনো বাগানে সরকারের পক্ষ থেকে রেশন বা চাল দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় সরকারি সহায়তা জরুরি।”
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি বিডিনিউজকে বলেন, “দেশের সব বাগান লাভ করছে। তাহলে ন্যাশনাল টি কেনো লাভ করছে না?
“বাগান বন্ধ করে দেওয়া নাকি, সরকারি মালিকানা থেকে অন্য মালিকানায় নিয়ে যাওয়ার কোনো পাঁয়তারা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সরকারি এই সম্পদ রক্ষা করুক।”
আর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরীর অভিযোগ, “ন্যাশনাল টি কোম্পানির এই অবস্থা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। এর জন্য কোম্পানির ঊর্ধতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্ন স্তরের কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। চরম অব্যবস্থাপনাই এই সংকটের মূল কারণ।”
তিনি বলেন, “একটি চা বাগানের জন্য প্রয়োজন পরিমিত পরিচর্যা, ভালো সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা প্রয়োজন। এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ন্যাশনাল টি গার্ডেনে নিম্নমানের সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। পরিমাণে কম দিয়ে কোম্পানিকে বেশি দেখানো এসব নিত্য-নৈমিত্য ব্যপার। সকল অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতি যাচাই করে এই বাগানটিকে রক্ষা করতে হবে সরকারকেই।”
সাবেক এ শ্রমিক নেতা বলছিলেন, “এখন সরকারের উচিত যে কোনোভাবে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে বাগান চালু করে উৎপাদন গতিশীল রাখা জরুরি। তা না হলে ন্যাশলান টি কোম্পানি দীর্ঘ ক্ষতির মুখে পড়বে। এক সময় এটি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।”
বেতন বন্ধ কেন? এমন প্রশ্নে মৌলভীবাজার ন্যাশলাল টি কোম্পানির পাত্রখলা চা বাগানের ডিজিএম মো. শফিকুল ইসলাম মুন্নার ভাষ্য, “বর্তমানে উৎপাদন খরচের চেয়ে চায়ের বিক্রয় মূল কম। অন্যদিকে চাও বিক্রি হচ্ছে কম। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছে বাগান। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।”
শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে চা শ্রম কল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম প্রিন্স জানিয়েছেন।