বাজারে এসেছে সাতক্ষীরার আম

এ বছর আশানুরূপ ফলন হওয়ায় সোয়া ২শ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমনসাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2023, 02:07 PM
Updated : 5 May 2023, 02:07 PM

আমপাড়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাজারে এসেছে সাতক্ষীরার আম।

শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার কুখরালীতে মোকছেদ আলী নামের এক চাষির বাগান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমপাড়া শুরু হয়।    

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মইনুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইউএনও ফাতেমা তুজ জোহরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, “সাতক্ষীরার কোনো অপরিপক্ক আম দেশের বাজারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভোক্তা ঠকতে পারে এমন যে  কোনো কাজ ঠেকানো হয়েছে কঠোরভাবে। তাতে দুষ্টু কিছু আম ব্যবসায়ী হয়তো কষ্ট পেয়েছে কিন্তু লাভবান হয়েছে সৎ আম চাষি ও সাধারণ ভোক্তা।”

সভাপতির বক্তব্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইউএনও ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “এ জেলার আম দেশের বাজার পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করেছে। সাতক্ষীরার আম নিরাপদ ও সুস্বাদু হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এই সুখ্যাতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে।”

সাতক্ষীরার আমের মধ্যে বিখ্যাত গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, বেশাখীসহ স্থানীয় বেশকিছু জাত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উত্তরণ নামের একটি প্রকল্পের চাষ করা জমি মিলে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানায়, জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি আছেন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যে ফলন হয়েছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

এবার সাতক্ষীরার আম দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

তিনি জানান, মাটি, বাতাস ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রোপালি, মল্লিকা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য জাতের প্রচুর আম উৎপাদন হয়।

এ জেলার আম নবম বারের মতো ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাবে বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

এবার বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন এবং রপ্তানির জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের শপগুলোতে যাবে সাতক্ষীরার আম।”

যোগাযোগ করা হলে সেই সময়ের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, গত বছর জেলায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে চাষ হওয়ার আমের উৎপাদন ছিল ৪০ হাজার মেট্রিকটন আম।

এ বছর আশানুরূপ ফলন হওয়ায় সোয়া ২শ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এ জন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। গত কয়েক বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কিছু গুটি ঝরে পড়ছে। 

আম চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, “এখানের আম অতুলনীয়। হিমসাগর বিখ্যাত। ল্যাংড়া ও আম্রোপালির চাহিদা বেশি। গত বছর ১৫টি বাগান কিনেছিলাম। এ বছর ২০টি লিজ নিয়েছি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।”

রাজার বাগান এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “গত বছর উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান লিজ নিলে তার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। বাগান পরিচর্যা, পোকামাকড়মুক্ত করতে ওষুধ প্রয়োগ, ফলনের পর বাজারজাত, শ্রমিকের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফলন ভালো হলে আমাদের লাভ হয়। এবার আশা করছি, লাভের মুখ দেখবো।”

এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানালেন কবির হোসেন নামের সুলতানপুর বাজারের এক আড়তদার।

তার ভাষ্য, “এ বছর কাঁচা আম ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কম দামে কাঁচা আম কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরও লাভ হচ্ছে।”