নিহত শিশুদের ফুফাতো ভাই ৬ মাস বয়সী সিয়ামও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
Published : 31 Jan 2023, 10:25 AM
কেক-পেটিস খাওয়ার পর গাজীপুর নগরীর সালনা এলাকার দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দোকানিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গাজীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে নিহত শিশুদের বাবা আশরাফুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। পরে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওইদিনই সন্ধ্যায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- গাজীপুর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার লাবু মিয়ার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার শিশু মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানার কোনাউর এলাকার দানু মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫) ও একই গ্রামের চান মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৪৫)।
তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম কেক-পেটিসের দোকানদার। বাকিরা সালনা এলাকার বেকারির কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
গত রোবাবর গাজীপুর নগরীর সালনা ইপসা গেট এলাকার কারখানা শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের মেয়ে আশামনি (৬) ও আলিফা আক্তারের (২) পেটিস ও কেক খেয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসাপালে শিশু দুটির ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাদের মৃত্যু খাদ্যে ‘বিষক্রিয়ায়’ হয়েছে।
এখন খাদ্যে বিষক্রিয়ার উৎস খুঁজছে পুলিশ। তারা পারিবারিক কলহ, পূর্ব শত্রুতাসহ কয়েকটি বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, “শিশু দুটির ময়নাতদন্ত করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাদের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, খাদ্যে বিষ কোথা থেকে আসতে পারে।”
শিশুদের স্বজনদের বরাতে ওসি জিয়াউল বলেন, গাজীপুর নগরীর সালনা ইসপা গেট এলাকার এরশাদ হোসেনের বাড়িতে আশরাফুল পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কারখানায় কাজ করলেও আশরাফুল গত ডিসেম্বর মাসে চাকরি ছেড়ে দেয়। তার নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। যার কারণে তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
রোববার সকালে শিশুদের মা সফুরা বেগম কাজে চলে যায়। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে মেয়েদের আবদারের কারণে স্থানীয় দোকান থেকে পেটিস ও কেক কিনে দেন আশরাফুল। তারা সেগুলি খেয়ে পাশেই খেলা করছিল।
জিয়াউল বলেন, “হঠাৎ বড় মেয়ে আশামনি অসুস্থ হয়ে বমি করতে থাকে। অসুস্থ অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এক প্রায় এক ঘণ্টা পর ছোট মেয়ে হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেও মারা যায়।”
শিশুদের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকে তার মালিক এরশাদ হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকরি করায় বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন তাদের নানি মনোয়ারা বেগম। সকালে আশরাফুল স্থানীয় সাইফুলের দোকান থেকে কেক ও পেটিস কিনে দিয়ে বাইরে চলে যায়। কেক খাওয়ার পর তার দুই সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়।
ওই বাসার ভাড়াটিয়া নিহত শিশুদের ফুফাতো ভাই ৬ মাস বয়সী সিয়ামও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
একই সময়ে তাদের সঙ্গে কেক খেয়েছিলো ১২ বছর বয়সী আলপনা আক্তার। সে বলে, “কেক আমিও খেয়েছিলাম, কিন্তু কিছু হয়নি। কেক খাওয়ার পর আশামনি বমি করে আর আলিফা চিৎকার শুরু করে।”
সোমবার বিকালে শিশুদের মা সফুরা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “এখন গাড়িতে আছি। মেয়েদের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।”
এক সঙ্গে দুই বোনের মৃত্যুকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে ওসি জিয়াউল বলেন, “পারিবারিক কলহ ও পূর্ব শত্রুতাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।”
গাজীপুরে ‘কেক-পেটিস’ খাওয়ার পর দুই শিশুর মৃত্যু, ধোঁয়াশায় পুলিশ