বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
Published : 15 Feb 2024, 10:05 PM
পরিবেশ ধ্বংস করে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে মানুষ নিশ্বাস নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, “আমরা একদিকে উন্নয়ন দেখি, মেগাপ্রকল্প দেখি কিন্তু আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারি না। আমাদের বাতাস ও নদী দূষিত, চারপাশে সব অপরাধী আর দুর্বৃত্তদের লম্ফঝম্ফ। কিন্তু যারা সৃজনশীলতা নিয়ে প্রাণ-প্রকৃতির জন্য কাজ করে তারাই কেবল আক্রান্ত হয়।
“যারা এই শহরে ত্বকীকে হত্যা করেছে তারাই আজ ক্ষমতাবান। অথচ এত তথ্য পাওয়ার পরও ত্বকী হত্যার বিচার এখনও হয় নাই। সাগর-রুনি, তনু হত্যাকারীদের তো খুঁজেই পাওয়া যায় না।”
বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “বর্তমানে দেশে জনগণের সংহতি দরকার। জনগণের সংহতি না হলে রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদী শাসন আমরা দেখতে পাই। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছি। আমাদের দেশেও স্বৈরতন্ত্রের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্যে আছি।
“স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটলেও স্বৈরতন্ত্র ঠিকই টিকে গেছে। যত নির্বাচিত সরকার এসেছে তারা ক্রমান্বয়ে স্বৈরতন্ত্রেরই চাষ করেছে। সেই পাকাপোক্ত স্বৈরতন্ত্রের কারণেই আজকে আমাদের জীবন সংকটাপন্ন।”
পূর্ব পাকিস্তানের ২২ পরিবারের মত এদেশেও বিভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা ব্যাংক লুট করছে, স্বৈরতন্ত্র তাদের জন্য খুবই দরকার। কারণ তারা বন ধ্বংস করে, নদী দখল করে, ব্যাংক লুট করে। গণতান্ত্রিক চর্চা, স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা, জবাবদিহিতা থাকলে দেশের সম্পদ লুট করা তাদের জন্য সম্ভব হতো না।”
তিনি বলেন, “স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাফল্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেদিন যাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রাম হয়েছিল, তারাই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশে বসে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করে বিত্ত-বৈভব গড়ে তুলছেন। কিন্তু যে দেশে ১৯৭১ সালের মতো মুক্তিযুদ্ধ হয় সেই দেশের জনগণকে দীর্ঘদিন দমন করে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না। এই দেশ কতিপয় গোষ্ঠীর না, এই দেশ জনগণের; এই বোধ তৈরি করতে সাংস্কৃতিক তৎপরতার কোনো বিকল্প নেই।”
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, “সেদিন যারা সংগ্রাম করেছেন, শহীদ হয়েছেন, নানাভাবে নিপীড়িত হয়েছেন, তাদেরকে গণতন্ত্রের নামে আজকে রাজনৈতিক তামাশা দেখতে হচ্ছে।
“যে সংস্কৃতি রাজনীতিবিচ্ছিন্ন, সাধারণ মানুষের জীবনের ইতিবাচক বিকাশ ও ক্ষমতায়নের পক্ষে কথা বলে না, সেই সংস্কৃতিচর্চা আসলে দেশের শাসক ও শোষকের পক্ষাবলম্বন করে। সমগীতের মত সংগঠনগুলো বরাবরই মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি। কিন্তু এতে আরও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “জীবনমুখী সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে কখনই সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের রাজনীতি এগিয়ে যায় না। এখন মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংগ্রাম হচ্ছে মানুষের গণতন্ত্রায়নের সংগ্রাম। কারণ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা শুরু হয়েছে সেখানের জাতীয় সংসদ ৭০ ভাগ মানুষ বিত্তবান, ব্যবসায়ীদের দখলে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিশেষ বিত্তবান শ্রেণির ক্লাবে পরিণত হয়েছে।”
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, “মানুষ টিকে থাকার প্রয়োজনে সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তা আমাদের জাতিতে জাতিতে একত্র করে। আমরা আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা থেকে যোজন-যোজন দূরত্বে অবস্থান করছি। আজও আমরা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কবি আরিফ বুলবুল ও রাজনৈতিক কর্মী বাকি বিল্লাহ।
আলোচনা পর্ব শেষে ফিলিপাইনের প্রতিবাদী কবি ও শিল্পী জেস সান্তিয়াগোকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ‘তারুণ্য-তাড়নার গান’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমগীতের সভাপতি দিনা তাজরিন ও সঞ্চালনা করেন শিল্পী অমল আকাশ।