প্রবেশনের শর্ত: বিএনপি-যুবদল নেতা পড়বেন মুক্তিযুদ্ধের ১২ বই

ফেইসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় ২০২১ সালে বগুড়ার একটি দৈনিকের সম্পাদক এ দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2023, 07:07 PM
Updated : 16 April 2023, 07:07 PM

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দণ্ডিত বগুড়ার এক বিএনপি ও এক যুবদল নেতাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে বলা হয়েছে।  

রোববার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ আদেশ দেন।

দণ্ডিতরা হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা ও শহর যুবদলের আহ্বায়ক আদিল শাহরিয়ার গোর্কী।

ফেইসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি বগুড়া থেকে প্রকাশিক একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করেন।

সাইবার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, সাতটি শর্ত দিয়ে এ দুই নেতাকে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। সাত শর্তের মধ্যে তৃতীয় শর্ত হলো দুই আসামিকেই মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ১২টি বই পড়তে হবে। কী কী বই পড়তে হবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আদালত।

বইগুলো হলো একাত্তরের দিনগুলি (জাহানারা ইমাম), একাত্তরে চিঠি (রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা), মা (আনিসুল হক), মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল (ড. কামাল হোসেন), আমার মুক্তিযুদ্ধ (আনিসুজ্জামান), উষার দুয়ারে (আনিসুল হক), দ্যা রেইপ অব বাংলাদেশ (রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী), আমি বিজয় দেখেছি (এম আর আক্তার মুকুল), চরমপত্র (এম আর আক্তার মুকুল), আমি বীরাঙ্গনা বলছি (নীলিমা ইব্রাহিম), হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (সেলিনা হোসেন) এবং রাইফেল রোটি আওরাত (আনোয়ার পাশা)।

প্রবেশনের প্রথম শর্ত হলো দুই আসামিকেই মামলার বাদী তানভীর আলম রিমনের কাছে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো আসামিদের ১০টি ফলজ ও ১০টি বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করতে হবে।

অন্য শর্তগুলোর মধ্যে আছে আসামিদের নিজ নিজ আইডি থেকে সাইবার সচেতনতা বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, প্রবেশনকালীন দোষী সাব্যস্ত আসামিরা কোনোরূপ অপরাধে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন।

ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই আসামি এক লাখ করে দুই লাখ টাকা আদালতে জমা দেবেন। এর এক লাখ পাবেন বাদী এবং এক লাখ পাবে রাষ্ট্র।

আইনজীবী ইসমত আরা জানান, আসামিরা প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রত্যেকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাদের।

প্রবেশন কর্মকর্তা প্রতি তিন মাস পরপর আসামিদের প্রবেশন শর্ত প্রতিপালন ও গতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন। তাদের প্রবেশন সন্তোষজনক হলে এই দণ্ড তাদের চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না।

মামলার বাদী তানভীর আলম রিমন বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক মহাস্থানগড় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।

তিনি জানান, বগুড়ার বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তিনি তার পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা তাকে হুমকি দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করেন। এই ফেইসবুক পোস্টে তাকে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয় এবং তাকে যেখানে দেখা যাবে সেখানেই মারধরের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। যুবদল নেতা আদিল শাহরিয়ার গোর্কীও তার ফেইসবুকে এই সাংবাদিকের ছবি পোস্ট দেন এবং ক্যাপশনে আপত্তিকর কথাবার্তা লেখেন।

তানভীর আরও জানান, আপত্তিকর এসব পোস্ট নজরে এলে তিনি ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এরই মধ্যে রাজশাহীতেও সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে মামলাটি ঢাকা থেকে রাজশাহী আসে।

রায়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।