“আপাতত সংস্কার কাজ চলছে। এটি শেষ করে পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ আমদানির পর মহাসড়কের অবশিষ্ট অংশের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হবে।”
Published : 10 Nov 2024, 08:48 AM
প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়কের বেহাল অংশের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
প্রকল্পটির ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের’ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফিরতে শুরু করার পর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মহাসড়কটির বেহাল অংশের সংস্কার কাজ শুরু হয়। এছাড়া এ সড়কের ঘাটুরা এলাকার সেতুর নির্মাণ কাজও চলছে।
এর মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা কাটছে’ বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলছিলেন “নিরাপত্তা নিশ্চিতের পর ভারতীয়রা একজন-দুজন করে আসতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ জন ভারতীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্প এলাকায় ফিরেছেন।
“আপাতত সংস্কার কাজ চলছে। এটি শেষ করে পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ আমদানির পর মহাসড়কের অবশিষ্ট অংশের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হবে।”
সেক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানান শামীম।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়াতে আশুগঞ্জ-আখাউড়া জাতীয় মহাসড়ক চার লেইনে সম্প্রসারণ এবং আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প দুটি হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারত। দুই প্রকল্পে নিয়োজিত ছিল ভারতীয় ঠিকাদারি কোম্পানির প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কটি চার লেইনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, কোভিড মহামারী ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বিলম্বিত হয় প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে ঠিকাদার কোম্পানির প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভারতে চলে যান। এতে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে হয়ে যায়। কাজ বন্ধের পর এ দীর্ঘ সময় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল নির্মাণ সামগ্রী ও দামি যন্ত্রাংশ।
এছাড়া দীর্ঘদিন প্রকল্পের অধীনে থাকায় মহাসড়কটিতে নিয়মিত সংস্কার কাজ করতে না পারায় অন্তত ৪ কিলোমিটার অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা।
ভারতীয় হাই কমিশন থেকে নিরাপত্তার কথা বলে ঠিকাদার কোম্পানিকে পুনরায় বাংলাদেশে এসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ ওই সময় জানিয়েছিলেন।
দীর্ঘ আলোচনার পর গত অক্টোরের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভারত থেকে ফিরতে শুরু করায় বেহাল অংশের সংস্কার কাজ আবার শুরু হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, “গত ২৭ অক্টোবর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।”
ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
প্রায় ৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা; যা বাস্তবায়ন হচ্ছে ভারতের ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।
তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথমটি আশুগঞ্জ থেকে সরাইল, দ্বিতীয়টি সরাইল থেকে আখাউড়ার তন্তরবাজার এবং তৃতীয় প্যাকেজটি তন্তরবাজার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত। সবকটির কাজই করছে ভারতীয় ঠিকাদারি কোম্পানি এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
এর মধ্যে তৃতীয় প্যাকেজের কাজ এখনও শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদার। তিন দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।