দপ্তরি রাসেল মিয়াকে নিয়মিতই এমন দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘রাসেল স্যার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
Published : 05 Jun 2024, 07:57 PM
শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক মাত্র দু’জন। তাদের একজন প্রশিক্ষণে আরেকজন গিয়েছেন সভায়। তাই একই সঙ্গে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি।
শরীয়তপুরের সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের ১২নং গয়ঘর খলিফা কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি রাসেল মিয়াকে নিয়মিতই এমন দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘রাসেল স্যার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
জানা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামের এই বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০। প্রতিদিন অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্কুলে হাজির হয়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এই বিদ্যালয়টিই তাদের শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র ভরসা।
তবে শিক্ষকের অভাবে তাদের পাঠদান ব্যাহত হয় চরমভাবে। অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার দেখা যায় বিদ্যালয়টির দপ্তরি রাসেল মিয়া একবার প্রথম শ্রেণির কক্ষে আবার দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কারণ গত তিন দিন ধরে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক পলাশ অধিকারী কারিকুলাম ট্রেনিংয়ে আর প্রধান শিক্ষক অমল অধিকারী ক্রীড়া সংক্রান্ত একটি সভায় যোগ দেওয়ায় বিদ্যালয়টি শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে।
যার কারণে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে একই সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান শুরু করেন বিদ্যালয়টির দপ্তরি রাসেল মিয়া।
তবে শুধু এদিনই নয় মাঝেমধ্যেই এমন দায়িত্ব পালন করতে হয় রাসেল মিয়াকে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অমল স্যার মিটিংয়ে গেছেন আর পলাশ স্যার ট্রেনিংয়ে থাকায় স্কুলে কোনো শিক্ষক নেই। তাই শিশুদের পাঠদান আমি নিজেই করছি। এছাড়া স্কুলে শিক্ষক সংকট থাকায় আমাকে প্রায়ই পাঠদান করাতে হয়।”
আমেনা আক্তার নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, “রাসেল স্যার আমাদের পড়াচ্ছেন। তিনি প্রায়ই আমাদের পড়ান।”
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফি হোসেন বলে, “সকালে স্কুলে আসছি। রাসেল স্যার আমাদের পড়িয়েছেন। এখন অন্য ক্লাসে গেছেন।”
স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমল অধিকারী বলেন, “ক্রীড়া বিষয়ক একটি মিটিংয়ে আমি ডোমসারে আছি। মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার শরীফ মো. এমারত। বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষক পলাশ ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। তাই স্কুলে কোনো শিক্ষক নেই।”
স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, “স্কুলে শিক্ষক সংকট থাকায় আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে মামুন নামে একজন শিক্ষককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনিও বর্তমানে না থাকায় স্কুলে মাত্র দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। একটি স্কুল মাত্র দুইজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালনা সম্ভব নয়।
“আমরা বারবার শিক্ষা অফিসে আবেদন করার পরেও আমাদের শিক্ষক দেওয়া হয়নি। তারা জানিয়েছে নতুন নিয়োগের পরে শিক্ষক দেওয়া হবে। তবে দপ্তরির পড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই।”
শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে শিক্ষক সংকট চলছে। তবে একটি বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক না রেখে কেন সব শিক্ষককে ট্রেনিং ও মিটিংয়ে নেওয়া হল, বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব। দপ্তরি দিয়ে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।”