“একদিকে পুলিশ অন্যদিকে হামলাকারী। মাঝখানে পড়ে যায় হান্নানসহ আরও কয়েকজন।”
Published : 19 Sep 2024, 08:41 AM
বিয়ের মাত্র আট মাসেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মুক্তা আক্তার। পৃথিবীতে আসার আগেই বাবা হারিয়েছে তার সন্তান। আর সন্তানকে হারিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন মা রশিদা বেগম ।
হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের মৃত্যুতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার পরিবারে। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৮ জুলাই ঢাকার মধ্য বাড্ডা এলাকায় গুলিতে নিহত হন ২৮ বছর বয়সী আব্দুল হান্নান।
আমিন মিয়া ও রশিদা বেগম দম্পতির পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন হান্নান। তিনি ঢাকার উত্তর বাড্ডায় একটি প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন। মাত্র আট মাস আগে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেছিলেন তিনি।
হান্নানের সঙ্গে কাটানো আট মাসের স্মৃতি নিয়ে কাঁদছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা আক্তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “গুলি লাগার প্রায় এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনে হান্নানের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, এখন দেশের অবস্থা ভালো না; টাকা পাঠানো যাবে না।
“সে বলেছিলো আমার ননদের কাছ থেকে টাকা এনে বাজার করতে। পরিস্থিতি ভালো হলে টাকা পাবো। আর বলেছিল, বাসায় গিয়ে কথা বলব। কিন্তু আর কথা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ফোন আসে, আমার স্বামীর মারা গেছে বলে জানায়।”
হান্নানের বাবা আমিন মিয়া বলেন, “ঘটনার দিন আমার ছেলে কাজ শেষ করে মধ্য বাড্ডা হয়ে কারখানায় ফিরছিল বলে আমরা শুনেছি। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে।
“একদিকে পুলিশ অন্যদিকে হামলাকারীরা। মাঝখানে পড়ে যায় হান্নানসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি।”
মা রশিদা বেগম বলেন, “ছাত্র আন্দোলনের সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে ও গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে আমার ছেলেসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে পুলিশ নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
হাসপাতাল থেকে ছেলের মরদেহ বুঝে পাওয়ার পর হাজীগঞ্জে এনে দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।
সুমন নামে হান্নানের এক প্রতিবেশী বলছিলেন, “হান্নান ধার্মিক মানুষ ছিলেন এবং সততার সঙ্গে জীবন-যাপন করতেন। তাছাড়া ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। মৃত্যুর আগে যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।”
গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল বলেন, “হান্নানের এমন মৃত্যু আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। সে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। আমরা তার পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি।”