আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
Published : 13 Jan 2024, 03:37 PM
পৌষের বিদায় বেলায় জেঁকে বসেছে শীত। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার দাপটও বেড়েছে। আর এর প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এ ছাড়া ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডা জনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁর বদলগাছীতে রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অধিদপ্তরের শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
দিনাজপুর: কুয়াশার দাপটে সূর্য উধাও হয়ে গেছে। ১০ জানুয়ারি থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুরো জেলা। সকাল ১০টা পর্যন্ত যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশাদুজ্জামান জানান, শনিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি শীত মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এর আগে চলতি পৌষ জুড়ে জেলায় তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছিল।
এদিকে কুয়াশার দাপট আর হাড় কাঁপানো কনকনে হিম শীতের প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের কাজ করতে হচ্ছে দুর্ভোগের মধ্যে।
নওগাঁ: উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া দিনমজুর দরিদ্র অসহায় মানুষ। ক্ষতির মুখে পড়েছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরা বীজতলা।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া অফিসে উচ্চ পর্যবেক্ষক কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ বলেন, শনিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশার কারণে ইরি-বোরো বীজতলা লাল বর্ণ ধারণসহ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকায় জেলায় লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
শীতে লোকজন ঘর থেকে কম বের হওয়ায় আয় অর্ধেকে নেমেছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের। এর ফলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো চাষাবাদ।
ইরি-বোরো চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা দীর্ঘায়িত হলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।সেক্ষেত্রে ইরি বীজ কিনে রোপণ করতে হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খলিলুর রহমান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর বোরো জমিতে রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। ঘন কুয়াশার কারণে কিছু কিছু এলাকায় বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে তবে কুয়াশা দীর্ঘায়িত না হলে বীজতলার তেমন কোন ক্ষতি হবে না।
তিনি দিনে বেলা বীজতলা ঢেকে রাখা, সন্ধ্যার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখা এবং এসব বীজতলায় ইউরিয়া, পটাশ সার ছিটানোর পরামর্শ দেন।
একই আলু ও সরিয়া ক্ষেতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে কীটনাশক স্প্রে, আলুর ক্ষেতে পানি দেওয়ারও পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
এদিকে জেলা সদরের রিকশাভ্যান চালক মোবারক আলী জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে লোকজন ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। অন্যদিকে যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, জেলায় সরকারিভাবে ৯৯ ইউনিয়ন ও ৩ পৌরসভায় ১ লাখ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা: জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, শনিবার সকাল ৬টায় জেলা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তীব্র শীতে শহরে মানুষের উপস্থিতি কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে আসছেন না। তবে পেটের তাগিদে দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসতে হয়েছে। রিকশা ভ্যানচালকরা আশানুরূপ যাত্রী পাননি।
দ্বিতীয় দিনের মত জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন মাঠে বোরো মৌসুমে কাজ। শীতের কারণে কৃষকরা কৃষকরাও মাঠে কাজে যেতে পারছেন না বা দেরিতে মাঠে যাচ্ছেন।
শীতজনিত রোগবালাইও বেড়েছে। প্রতিদিনই শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ আসছেন হাসপাতালে।
সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, “কদিন ধরে হঠাৎ করেই শীত জেঁকে বসেছে। আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছি না। বেচাকেনা কমে গেছে।”
লালমনিরহাট: পৌষের শেষে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় লালমনিরহাটের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে নদী চরাঞ্চল এবং তীরবর্তী লোকালয়ের মানুষ ঠান্ডার প্রকোপে স্থবির হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শনিবার সকাল ৮টায় লালমনিরহাটের তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ৪ দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীতে ভোগান্তি বেড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট ও লোকালয়। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে মানুষের।
কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকজনের। রাতে বৃষ্টির মত ঝরছে কুয়াশা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা তিস্তা পাড়ের বারঘরিয়া গ্রামের আজাদুর রহমান (৫২) বলেন, “ঠান্ডাত কষ্টের আর শ্যাষ নাই। ঠান্ডাত আবাদ সুবাদ সউগ শ্যাষ হয়া যাবার নাগছে! ঠান্ডাত জীবন বাঁচে না, আর কি কাম করমো।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, “এখন পর্যন্ত জেলায় পাঁচটি উপজেলায় ২৪ হাজার কম্বল বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেগুলো বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।”
রংপুর: রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ রংপুর ছাড়াও বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে।
আরও কমপক্ষে ২ দিন এমন তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে মেঘের আনাগোনার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জেলায় ভোর আর সন্ধ্যায় গ্রামে গ্রামে জটলা বেঁধে আগুন পোহানোর মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকেই। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও।
কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হচ্ছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ দিনের ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। দগ্ধ রোগীদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১৩ জন এবং বাকি ৩২ জনকে সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রংপুরের বাইরে বিশেষ করে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ে এই অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেশি ঘটছে।
এছাড়া, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া এক বৃদ্ধা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঠাকুরগাঁও: উত্তরের এই জেলায় অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে বেড়েছে ঠান্ডা। আর এই ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে ছিন্নমূল মানুষেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, শনিবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
“এটিই চলতি শীত মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।”
তিনি বলেন, “ঘন কুয়াশায় ধানে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে; আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে বীজতলা রক্ষার জন্য।”
অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। কাজকর্মে গতি কমে যাওয়ায় অনেকের রোজগার কমে গেছে।
জেলা শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার রিকশাচালক আবু মণ্ডল বলেন, আগে ভোর বেলা রিকশা নিয়ে বের হতাম। এখন শীতে ভোরে রিকশা বের করতে পারছি না। অন্যদিকে রিকশায় ঠান্ডা বেশি লাগায় যাত্রীও কম পাচ্ছি। এ কারণে আয়-রোজগার কমে গেছে।
সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ি এলাকা থেকে জেলা শহরের চৌরাস্তায় কাজের অপেক্ষায় থাকা দিনমজুর নজরুল ইসলাম বলেন, “ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার তানে ৫ দিন ধরে কুন কাজ পাউনি। ঠান্ডার তানে আয় রোজগারও কমে গেইছে। স্ত্রী, ছুয়া নিয়া কষ্টে দিন যাছে।”
শহরের বাসস্ট্যান্ডে এলাকার ট্রাক চালক আরিফ হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলতায় এবার ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি; সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। শীতে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। সরকার থেকে পাওয়া ৩৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। কম্বলের চাহিদা আরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
নীলফামারী : শনিবার সারা দেশের তৃতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়। এ জেলার উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমান বন্দর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম।
ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে গোটা জেলা। শনিবার সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। এমন অবস্থা গত চারদিন ধরে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহিরে বের হচ্ছে না মানুষ।
চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ক্ষেতে খামারে কাজে নামতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা। শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে অনেককে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে শহরের মরাল সংগ মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষা রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের মরলের ডাঙ্গা গ্রামের সিদ্দিকুল ইসলাম (৪০)।
তিনি বলেন, “গেল চার দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখিনি। কনকনে শীত উপেক্ষা করে সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা, মানুষজন নাই বলেই চলে।
“যা দু-একজন মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, তারা শীতের কারণে কেউ রিকশায় উঠছেন না। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা আয় করেছি।”
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড়। প্রতিদিন গড়ে জেলা সদর হাসপাতালে সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের ১৫ শয্যার শিশু বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ শিশু ভর্তি হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন দুই বছর বয়সি শিশু রিফাত হোসেনের মা রাফিকা বেগম বলেন, “প্রচণ্ড শীতে আমার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসক দেখে বলেন, সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।”
অপরদিকে সকাল থেকে ঘন কুয়াশা থাকায় আকাশে পথে ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা বিমান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়ে। আকাশ পথে বিমান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক দৃষ্টিসীমা এক হাজার ৫০০ মিটার প্রয়োজন হলেও বিকাল ৩টা পর্যন্ত দৃষ্টিসীমা ১০০ থেকে ৮০০ মিটারে ওঠানামা করে। পরে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল বিমান চলাচল।
আবহাওয়া কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, শনিবার জেলায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় উত্তর পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় তিন থেকে ৪ কিলোমিটার। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।
আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকায় বিকাল ৩টা পর্যন্ত সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি।
১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে; এ সময় তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে ছয় উপজেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
সরকারিভাবে নতুন করে আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।