জানতে চাইলে ‘আচ্ছা আমি বিষয়টি দেখতেছি’ বলে এড়িয়ে যান ইউএনও।
Published : 17 Feb 2025, 08:46 PM
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার তিনটি অনুমোদনবিহীন ইটভাটা বন্ধের এক মাসের মাথায় আবার চালু হয়েছে।
অনুমোদন না থাকায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তারের নেতৃত্ব এমএমসি, কেবিএম ও ফাইভ স্টার নামে তিনটি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। তখন ইটভাটার মালিকদের মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়।
একইসঙ্গে পানির সাহায্যে কয়েকহাজার কাঁচা ইট ধ্বংস করে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ ও নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দেখা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলায় ওই তিন ইটভাটা আবার চালু হয়েছে।
যদিও ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ইউএনও শিরীণ আক্তারের কাছে পুনরায় ইটভাটা তিনটি সচল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘আচ্ছা আমি বিষয়টি দেখতেছি’ বলে এড়িয়ে যান।
তিন পার্বত্য জেলার লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করে।
রিটটির শুনানি শেষে আদালত অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়।
তবে বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং আদালতে তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন না দেওয়ায় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আবারও পার্বত্য তিন জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
আদালতের নির্দেশনার পর তড়িগড়ি করে ইটভাটা বন্ধের কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন।
যদিও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের এক মাসের মধ্যেই ফের সচল হচ্ছে ভাটাগুলো।
বিষয়টিকে প্রশাসন ও ভাটা মালিকদের মধ্যে ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’ বলছেন পরিবেশবাদীরা।
ন্যাচার অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি অব সিএইচটির সংগঠক প্রান্ত রনি বলেন, “প্রশাসনের ইটভাটা বন্ধের কার্যক্রম ও ভাটা মালিকদের পুনরায় ভাটা সচল করা ইঁদুর-বিড়াল খেলায় পরিণত হয়েছে। ইটভাটা বন্ধের কয়েকদিন পরেই পুনরায় ভাটাগুলো সচল করা হচ্ছে। বিজ্ঞ আদালতের আদেশের পর ক'দিন স্থানীয় প্রশাসন তড়িগড়ি কর ভাটাগুলো বন্ধের কাজ শুরু করে। আবার পরবর্তীতে চালু হচ্ছে ভাটাগুলো। এখানে প্রশাসনের অবশ্যই গাফিলতি রয়েছে, ভাটা বন্ধের পর সেটি আবার পুনরায় চালু হচ্ছে কিভাবে? এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সারাবছরই ভাটা সচল হবে আর বন্ধ করা হবে। প্রশাসন প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক হবেন বলে আমরা আশা করি। কেবল দায়িত্ব পালন করে চলে আসলে প্রকৃতি রক্ষা হবে না।”
রাঙামাটির ডিসি মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ঢাকায় ডিসি সম্মেলনে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহল আমীন বলেন, “আপনাকে তাৎক্ষণিক বক্তব্য দিতে পারব না। আমাকে আইনগত মতামত দেখে দিতে হবে। এ বিষয়ে আপনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন করতে পারেন, যেহেতু মোবাইল কোর্টগুলো তিনি দেখেন।”
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান মো. সাইদুজ্জামান বলেন, “বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটা চালুর কোনো সুযোগ নেই, সেটা বন্ধ থাকার কথা। আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।”
পরিবেশ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম বলেন, “দেশের নাগরিক হিসেবে মহামান্য হাই কোর্টের আদেশ কারোই অমান্য করার সুযোগ নেই। মহামান্য হাই কোর্টের আদেশ প্রতিপালন হিসেবে বাঘাইছড়ির তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু সম্প্রতি ইটভাটা তিনটি চালুর খবর আমরা পেয়েছি।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, “এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”