শিক্ষার্থীরা হারিয়েছে বই, স্কুলড্রেস, স্কুল ব্যাগ; পানি নামার পর অনেক স্কুল থেকে কাদা পরিষ্কার করতে লেগেছে সাত দিন।
Published : 13 Sep 2024, 01:23 AM
ভয়াবহ বন্যার শুরুতেই পানি উঠতে শুরু করেছিল তাহসান তানজিমদের বাড়িতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই এক কাপড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন তারা।
ফেনীর গিরিশ-অক্ষয় একাডেমি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তানজিমদদের বাড়ি পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের একাডেমি রোডে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ঘর থেকে কোনোকিছুই আর বের করা যায়নি; তাহসান ও তার ভাইবোনেরা কেউ নিজেদের পাঠ্যপুস্তকও সঙ্গে নিতে পারেননি।
তানজিমের পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল তারই স্কুলের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায়। টানা এক সপ্তাহ তাদের বাড়িতে পানি ছিল মাথার উপরে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে বাসায় কোনো বইপত্র পাননি তাহসান। ফলে পড়াশোনা ও স্কুলে যাওয়া নিয়ে সে বেকায়দায় পড়েছে। অথচ আগামী বছর তার এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা।
তানজিম বলছিল, বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন সময় নানা কারণে টানা স্কুল বন্ধ থাকায় এমনিতেই ঠিকমত সিলেবাস শেষ করা যায়নি। বন্যায় বই-খাতা সব নষ্ট হওয়ায় কিছুদিন বাদে তাকে নির্বাচনি পরীক্ষায় বসতে হবে প্রস্তুতি ছাড়াই।
একই বিপদের মধ্যে পড়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর কহুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী লুসাইবা জামানের পরিবার। বন্যার পানিতে বাচ্চাদের সব বই নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে স্কুল এখনো শুরু হয়নি। ফলে বাচ্চাদের পড়াশোনাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
শিশু লুসাইবা জামান বলছিল, তার নতুন বই লাগবে। সে স্কুলে যেতে চায়।
নানা কারণে এ বছর ভালো পড়াশোনা হয়নি বলে সিলেবাস শেষ করতে পারেনি ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নওরিন সুলতানা। এখন বন্যার কারণে প্রায় এক মাস ধরে স্কুল বন্ধ। পুরোপুরি চালু হলেও অনেকে বইয়ের অভাবে পড়বে।
নওরিন বলছিল, দীর্ঘদিন স্কুলে যেতে না পারায় পড়ালেখা বিঘ্ন ঘটছে। দ্রুত স্কুলে ফিরতে চায় সে।
প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর সদর উপজেলার চেওরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে। তবে শিক্ষার্থীরা সবাই ফেরেনি।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া সুলতানা জানাল, স্কুলে সে প্রতিদিনই যাচ্ছে। তবে তার অনেক সহপাঠী এখনও আসছে না।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাহমুদা হক জানান, জেলার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হলেও বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা পারেনি। এখনো অনেক স্কুলে পরিচ্ছন্নতা আর মেরামতের কাজ চলছে।
“শুধু ক্লাস চালু করলে তো হবে না, বাচ্চাদের দিকটাও দেখতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো দুর্গন্ধময় হয়ে রয়েছে। বইপত্রের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
অগাস্টের বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফেনীতে। সেখানকার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত পানিবন্দি ছিল লাখ লাখ মানুষ।
হঠাৎ করে প্রবল বেগে পানি আসায় মানুষজন জীবন বাঁচাতে এক কাপড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছিল। ঘরের মালামাল কোনো কিছুই তারা নিয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষার্থীরাও তাদের বই বাঁচাতে পারেনি।
অনেকের স্কুল ড্রেসও নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরলেও পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পুরনো বই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারিভাবেও নতুন করে বইয়ের চাহিদা চাওয়া হয়েছে।
বন্যার কবলে ফেনীর চার লাখ শিক্ষার্থী
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলার প্রায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪১টি কলেজ ও কারিগরি, ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৮২ হাজার শিক্ষার্থী গত ২০ অগাস্ট থেকে ক্লাসে ফিরতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ ক্লাস শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রাথমিকের পাঠদান নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা কর্মকর্তা। বৈঠকে যেসব বিদ্যালয় পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার জিএম হাট নূরপুর আবদুল হাকিম ভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জার আফসান খানম বলেন, তার বিদ্যালয় ১০ ফুট পানির নিচে ছিল। ২৭ অগাস্ট স্কুল থেকে পানি নেমে গেলেও কাদায় ভরপুর শ্রেণিকক্ষগুলো পরিষ্কার করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগেছে। ভেজা বেঞ্চ রোদে শুকোতে হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান উপযোগী করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
একই উপজেলার মুন্সিরহাট ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ লোকমান আলী জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নিচতলার ১৩টি শ্রেণিকক্ষ, মসজিদ, মেয়েদের কমনরুম, বিজ্ঞানাগার, শিক্ষক মিলনায়তন ও লাইব্রেরি সম্পূর্ণ ডুবে ছিল। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের রাখা শত শত বই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা দুর্গত আটটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল এ মাদরাসায়।
তিনি জানান, মাদরাসা থেকে আলিম ও ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা হয়। বইগুলো মাদারাসার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করতেও অনেক টাকা চলে গেছে।
একই উপজেলার উত্তর দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এরশাদ উল্যাহ চৌধুরী বলেন, তাদের স্কুল অন্তত আট ফুট পানির নিচে ছিল। স্কুলের ল্যাপটপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। স্কুলের প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দোলন কৃষ্ণ সাহা বলেন, বন্যায় ফেনী সরকারি কলেজ, সংলগ্ন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের কোনো শ্রেণিকক্ষই এখনও কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলার সব স্কুলই পানিতে ডুবেছে। প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসক বরাবর সম্ভব্য ক্ষতির হিসাব জমা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ফেনীতে সরকারি-বেসরকারি ৪১ কলেজের সবগুলোতেই বন্যার পানি ঢুকেছিল। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকার বেশি।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসরাত নূরজাহান সিদ্দিকা বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৩৫টি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে ১৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এসেছে। কয়েকটি উপজেলা থেকে এখনো হিসাব আসেনি।
পুরনো বই সংগ্রহ
হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বই, খাতা ও শিক্ষা উপকরণ ভিজে নষ্ট হয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে পুরনো বই সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক আবদুল আজিজ বলেন, ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি বুথ বসিয়ে পুরনো বই সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রায়হান মেহবু্ব।
আরেক সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল জোবায়ের বলেন, “যেহেতু মাধ্যমিক ও প্রাথমিকে পুরনো সিলেবাসে চলতি শিক্ষাকার্যক্রম চলমান নেই, সেহেতু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পুরনো বই সংগ্রহ করা হচ্ছে না। শুধু নবম ও দশম শ্রেণির বই, গাইড এবং উচ্চমাধ্যমিকের বই সংগ্রহ চলছে।”
এই কার্যক্রমে যুক্ত সহসমন্বয়ক সালমান হোসেন জানান, তারা বেশকিছু শিক্ষার্থীকে বই দিয়েছেন। তবে আরো বহু শিক্ষার্থীর বইয়ের চাহিদা রয়েছে। সংগ্রহ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সবার মাঝে বই বিতরণ করা হবে।
হাবিবার স্কুলড্রেসও নেই
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নানুয়ার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবাদের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে বন্যায়। পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত বাড়িতে হাবিবা খুঁজে পেয়েছে তার স্কুল ব্যাগ। কিন্তু টানা ১২ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হয়েছে তাদের তিন বোনের সব বই-খাতা।
হাবিবা বললো, “বই-খাতার সঙ্গে আমাদের স্কুলের ব্যাগ ও স্কুলের পোশাকও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন স্কুল খুললেও যেতে পারব না।”
একই অবস্থা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বেসরকারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনিক চন্দ্র দাসের। তারও বই-খাতা বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।
অনিক চন্দ্র দাস বলছিল, “বন্যার পানি কমার পর বাড়িতে এসে বই-খাতা শুঁকাতে দিয়েছিলাম। পরে দেখলাম এগুলোতে আর পড়া বা লেখা যাবে না। আমার বোন জয়ার বইখাতাও নষ্ট হয়ে গেছে।”
জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুড়িচং উপজেলা। গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এক রাতে তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো উপজেলা। সে কারণে প্রাণ বাঁচাতে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সঙ্গে নিতে পারেনি বইখাতাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
শিক্ষার্থীদের বইখাতা বানের পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে বলে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বুড়িচং উপজেলার খাড়াদাতাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিনুয়ারা আক্তার বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারই বন্যার কারণে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোও কষ্টকর। শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে। তাদের আবার স্কুলমুখী করতে হলে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
উপজেলার সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ জানান, নিজের চোখের সামনে বাড়িঘর ভেঙে যেতে দেখে শিশু শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। তাদেরকে সবার সহযোগিতার মাধ্যমে আবার স্কুলে ফেরাতে হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে ৭২৪টি। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যায় ২৮৬টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সংস্কার ছাড়া পাঠদান শুরু করা যাবে না এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০৫টি। বন্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “বন্যায় যেসব শিক্ষার্থীর বইখাতা ও স্কুল-কলেজের পোশাক হারিয়েছে, আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।”
বই নষ্ট, উপস্থিতি কম
তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নোয়াখালীতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে। অনেক জায়গায় বাবার পানিবন্দি মানুষ অবস্থান করছেন। ফলে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করা যায়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনসুর আলী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৫৩টি। এর মধ্যে পাঠদান শুরু করা গেছে ৭৫৪টি বিদ্যালয়ে।
বন্যায় জেলার ৭৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলায় অনেক শিক্ষার্থীর বইখাতা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এ দুই উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ছয় হাজার নতুন বইয়ের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা শহরের মাইজদী একাডেমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওগত জাহান কনিকা বলেন, বন্যায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান শুরু করা হলেও বাড়িঘরে পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। অনেক শিক্ষার্থীর বইখাতা নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে এখনো বিদ্যালয়ে পানি পড়ে।
সদর উপজেলার গোলাম মাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কারণে ২১ দিন বন্ধ ছিল। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কিছু ক্লাস শুরু হয়েছে সেখানে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিবি মরিয়ম বলেন, “তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু করা হয়েছে। মাঠে একহাঁটু পানি থাকায় বাকি ক্লাসগুলো শুরু করা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র করায় ওয়াশব্লক নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে ভবনের রং উঠে গেছে।
২১ অগাস্ট থেকে সোনাইমুড়ী উপজেলার বনগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। চলতি সপ্তাহেও সেখানে কয়েকজন ছিলেন। শিশুদের খেলনা ও ওয়াশব্লক নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা ও পাশের সড়কে এখনো হাঁটু সমান পানি। আশপাশের বাড়িঘরেও পানি।
ফলে স্কুলে এখনো পাঠদান শুরু করা যায়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থীর বইখাতা পানিতে ভেসে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় কবে নাগাদ পাঠদান শুরু করা যাবে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে পাঠদান শুরু করার আগে যেসব শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে তাদেকে নতুন বইয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, নোয়াখালীতে ৩৬৩টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ৩৪৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ স্কুল-কলেজই বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পানি কমে গেলে খুব শিগগিরই বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী উপজেলায় শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করা যাবে।