গায়ের রং শুধু কালো বলেই নয়, গায়ে-গতরে জোর থাকায় নাম ‘কালো রংবাজ’; চটপটে আর বুঝদার স্বভাবের জন্য আদর করে ডাকা হয় ‘বিন্দাস’ আর বিশালকৃতির বলে নাম ‘মানিক বাহাদুর’। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখের এদের প্রত্যেকেরই বিশেষ যত্ন নিতে রাতদিন খাটছেন মানিকগঞ্জের খামারিরা।
Published : 03 Jul 2022, 06:51 PM
বাহারি নামে ক্রেতাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা জেলার খামারিদের দাবি, গরুগুলোর ওজন ৩০ থেকে ৩৫ মণ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে এসব গরুকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবারে পালন করা হয়েছে বলে মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান।
মাহবুবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলায় খামার রয়েছে ১১ হাজার ১৫৫টি। এসব খামারে কোরাবানির জন্য ৩১ হাজার ৬৭টি গরু, ২৯ হাজার ৭১৭টি ষাঁড়, এক হাজার ৩৫০টি বলদ, ৮৫টি মহিষ, ১৮ হাজার চারটি ছাগল এবং চার হাজার ৯৩টি ভেড়া রয়েছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় তিন হাজার ৫৯৭টি, শিবালয় উপজেলায় তিন হাজার ২৬৮টি, ঘিওর উপজেলায় তিন হাজার ৮৬৭টি, সাটুরিয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৯৬৪টি, সিংগাইর উপজেলায় ১৬ হাজার ৩১৮টি, হরিরামপুর উপজেলায় সাত হাজার ৭৫৪টি এবং দৌলতপুর উপজেলায় ১০ হাজার ৮২টি গবাদিপশু রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘কালো রংবাজ’ আর ‘বিন্দাস’ নামের গরু দুটিকে কোরবানির ঈদের জন্য বড় করেছেন সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটির সাহা পাড়ার খামারি ফিরোজা বেগম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এই খামারি দাবি করেন, দুই গরুর ওজন হবে মোট ৭০ মণ।
তিন বছর আগে চার লাখ টাকা দিয়ে কেনা গরু দুটি ভুষি, মালটাসহ অন্যান্য খাবার খায়। এই কয় বছরের খরচ তুলতে খামারি ফিরোজা বেগম তাদের দাম হাঁকাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, “গত বছরের চেয়ে এ বছর দানাদার খাবার বস্তাপ্রতি অনেক বেড়ে গেছে। একটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়, খরচের টাকা না উঠলে তো আর গরু বিক্রি করা যায় না।“
‘কালো রংবাজ’ নাম রাখা সম্পর্কে ফিরোজার ছেলে আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গায়ের রং কালো আর অনেক সাহসী আর শক্তিশালী বলে ‘কালো রংবাজ’ রাখা হয়েছে। আর বিন্দাস নাম রাখার পেছনে কারণ হলো গরুটি অনেক কিছু বোঝে, চটপটে মনে হয়।“
সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এবং সাড়ে আট ফুট লম্বার হলেস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ‘মানিক বাহাদুর’ নামের ষাঁড়টিকে ঈদে হাটের তোলার জন্য প্রস্তুত করছেন খামারি সিরাজুল। সাড়ে তিন বছর বয়সী ষাঁড়টির বর্তমান ওজন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ মণ। সিরাজুল দাম ধরেছেন ১২ লাখ টাকা।
উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়ি সংলগ্ন সিরাজুলের খামারে বেড়ে ওঠা `মানিক বাহাদুর’কে দেখার জন্য অনেক ক্রেতাই ছুটে আসছেন।
খামারি সিরাজুল জানান, ‘মানিক বাহাদুরের’ পেট ভরানো হয় ছোলা, ভুসি, গম ও কাঁচা ঘাসে। মোটাতাজা করতে কোনো ধরনের ওষুধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয়নি বলেও দাবি তার।
ষাঁড়ের এই নামের বিষয়ে সিরাজুল বলেন, “নিজ জেলা মানিকগঞ্জের সঙ্গে মিলিয়ে ‘মানিক’ ও বিশাল বড় বলে ‘বাহাদুর’ নাম যোগ করেছি। সব মিলিয়ে পুরো নাম ‘মানিক বাহাদুর’।“
এদিকে হরিরামপুর উপজেলার রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের গোয়ালে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আনুমানিক ৩০ মণ ওজনের ‘সম্রাট’। জাকির হোসেন জানালেন, তার মূল পেশার জন্য সম্রাটের খুব একটা যত্ন তিনি নিতে পারেন না। যা দেখাশোনা তার স্ত্রী আর ছেলে মিলেই দিনরাত করে থাকে।
সাদা-কালো রংয়ের মিশেলে ফ্রিজিয়ান জাতের ৩৬ মাস বয়সী ‘সম্রাট’কে জাকির হোসেন শখের বসেই পাশের গ্রাম থেকে কিনেছিলেন। নামটিও রাখা আদর করে। আনুমানিক ৩০ মণ ওজনের ‘সম্রাট’কে বিক্রির জন্য ১২ লাখ টাকা চাইছেন জাকির হোসেন।
জাকির হোসেন বলেন, “২০ মাস আগে ‘সম্রাট’কে ৭৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। প্রতি মাসে ‘সম্রাটের’ পেছনে আমার ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ পর্যন্ত খাবার বাবদ প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত খাবার দিয়ে গরুটাকে এতো বড় করেছি।“
আদরের ষাঁড়টির পেছনে খরচ করার আর সঙ্গতি নেই জানিয়ে এই খামারি আরও বলেন, “আমি গরিব মানুষ এতো টাকা কই পামু। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বছরই গরুটা বিক্রি করার। তবে আমি আশায় আছি, বাড়ি থেকে যেন গরুটা বিক্রি করতে পারি। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।“
মানিকগঞ্জ ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি মো. মহিনুর রহমান জানান, জেলার খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু প্রস্তুত করেছে।
“ভারতীয় গরু আসার কারণে গত বছর ন্যায্যমূল্য পায়নি তারা। আশা করছি, এবারের ঈদে ভারতীয় গরু প্রবেশ করতে দেবে না সরকার। ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে হয়তো খামারিরা কিছু টাকা লাভের মুখ দেখবে।“