কুষ্টিয়ায় ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে’ হত্যা মামলায় আদালতে কথিত পিরের বদলে হাজিরা দিতে গিয়ে এক ভক্ত আটক হয়েছেন।
Published : 30 Oct 2021, 07:52 PM
পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে নাজিম উদ্দিন ফকির (৬৫) নামের ওই ব্যক্তি একথা স্বীকারে করেছেন বলে দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান।
এই বিষয়ে নাজিম উদ্দিন ফকির আদালতেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানান ওসি নাসির।
নাজিম উদ্দিন ফকির দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের করীম আলীর ছেলে। তিনি কুষ্টিয়ার একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদের (৬০) ভক্ত বলেও পুলিশকে জানান।
ওসি নাসির উদ্দিন জানান, গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুনের আদালতে হাজির হয়ে নাজিম উদ্দিন ফকির নিজেকে সৈয়দ তাছের আহমেদে বলে পরিচয় দেন এবং জামিনের আবেদন করেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ওই হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীরা অভিযোগ করেন - আসল আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের বদলে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন অন্য কেউ।
ওসি বলেন, মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক ও সাক্ষী রেজাউলের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নাজিম উদ্দিন ফকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৫ অক্টোবর আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।
আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় নাজিম উদ্দিন ফকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দৌলতপুর থানা পুলিশ হেফাজতে নেয় বলে জানান ওসি।
“তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের করীম আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ফকির।”
ওসি আরও বলেন, “রিমান্ডে দেওয়া জবানবন্দির সত্যতা যাচাইয়ে শুক্রবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শন করে নাজিম উদ্দিন ফরিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে গত ১৭ অক্টোবর সকালে আদালতে একটি হত্যা মামলায় যিনি সৈয়দ তাছের আহমেদ সেজে আত্মসমর্পণ করেন তিনি তাছের আহমেদ নন, তিনি নাজিমিউদ্দিন ফকির।”
নাজিমেউদ্দিন ফকিরের পরিবারের বরাত ওসি বলেন, নাজিম ফকির দীর্ঘদিন ধরে তাছের আহমেদের ভক্ত হিসেবে তার ‘দরবারে’ যাতায়াত করছিলেন। সেই সূত্রে প্রকৃত আসামি উপজেলার চরদিয়া গ্রামের প্রয়াত আজের উদ্দিন মালিথার ছেলে সৈয়দ তাছের আহমেদের (৬০) অনুরোধ ও পরামর্শে এবং কিছু আর্থিক সুবিধা লাভের বিনিময়ে নজিম উদ্দিন ফকির এ কাজ করেন।
কুষ্টিয়া আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইমরান হোসেন জনান, গত ৬ জুন সকালে উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদের দরবারে মোবাইল চুরির অভিযোগে স্থানীয় হরিণগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের নামোল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় এজাহার নামীয় পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার হলেও প্রধান আসামি কথিত পির সৈয়দ তাছের আহমেদ পলাতক থাকেন।
কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে প্রকৃত আসামির বদলে অন্যকোনো ব্যক্তি আত্মসর্মণ করেছেন এমন কথা জেনেছি। বিষয়টির প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া আদালত প্রকৃত তাছের আহমেদ এবং ভুয়া তাছের আহমেদের (নাজিম উদ্দিন ফকির) জাতীয় পরিচিতি নম্বর ধরে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বলেও পিপি জানান।