পাবনায় গণপূর্ত ভবনে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা সেই আওয়ামী লীগ নেতার কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের আরও ঘটনা প্রকাশ হয়েছে।
Published : 16 Jun 2021, 12:26 AM
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন সম্প্রতি দলবল নিয়ে শটগানসহ পূর্ত ভবনে ঢোকার ঘটনা ফাঁসের পর আলোচনায় আসেন।
এরপর পুলিশ তার দুইটি অস্ত্র জব্দ করে। এরই মধ্যে অস্ত্রগুলির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করার কথাও জানায় পুলিশ।
এর আগে গত ২৩ মে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পাবনার সহকারী প্রকৌশলী ও দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেককে লাঞ্ছিত করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
জেলার এলজিইডি কার্যালয়ের সেই ঘটনা প্রসঙ্গে আব্দুল খালেক বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
“২৩ মে দুপুরে হঠাৎ হাজি ফারুক হোসেন আমার কক্ষে এসে কাজটি তাকে দেওয়ার দাবি করেন। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন, দরপ্রস্তাব ও কাগজপত্র ঠিক থাকলে কাজ পাবেন; আর এসব যোগ্যতা না থাকলে বাতিল হবে। এটি বললে তিনি (ফারুক) ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে মারতে উদ্যত হন। অফিসের সহকর্মীরা এসে তাকে নিবৃত্ত করলেও তিনি আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।”
এ ঘটনায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে আব্দুল খালেক বলেন, “ঘটনা অবহিত করে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
“আমি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু প্রভাবশালী দুজন জনপ্রতিনিধি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ নিয়ে আমাদের অফিসে আসেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টির মীমাংসা করে নেন।”
সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রতিনিধি নেতাদের নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে ফারুক হোসেন বলেন, “প্রকৌশলী আব্দুল খালেকের সাথে আমার কাজ নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি; সামান্য কথাকাটাকাটি হয়েছিল। আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।”
এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ঢুকে সুপারিনটেনডেন্ট মুশফিকুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় মুশফিকুর রহমান ‘জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে’ পাবনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
এ বিষয়ে মুশফিকুর রহমান জানান, জেলা ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে সব সরকারি কর্মকর্তার বেতন এবং উন্নয়ন কাজের বিলের অর্থ দেওয়া হয়।
“নাইস কন্সট্রাকশনের মালিক ফারুক হোসেন তার একটি ঠিকাদারি কাজের জামানাতের পাঁচটি চালান হারিয়ে ফেলায় ডুপ্লিকেট চালান তৈরি করে বিল দাখিল করেন।
“বিষয়টি আইনসম্মত না হওয়ায় হারিয়ে যাওয়া চালানের অনূকূলে থানায় সাধারণ ডায়েরিসহ বিল দাখিলের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বিকালে ম্যানেজার আসাদকে সঙ্গে নিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হন।
“অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে এসে তাকে থামাতে গেলে তিনি আমাকে হত্যার হুমকি দেন। পরে দলীয় নেতাদের সাথে নিয়ে এসে তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান।”
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারুক হোসেন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ফারুক হোসেন পাবনা পৌরসভার কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আতোয়ার হোসেনের ছেলে। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
ফারুকের খালাত ভাই আবুল বাশার জানান, ফারুকের বাবা ব্যবসা করে অভাব-অনটনে সংসার চালাতেন। ২০/২১ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর তাদের পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। এর মধ্যে ফারুক ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়ি দেন।
“কয়েক বছর বিদেশে থেকে ফিরে এসে পাবনা নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে কসমেটিকস ব্যবসা শুরু করেন ফরুক। অত্যন্ত কষ্ট করে তিনি আজকের অবস্থায় এসেছেন। এখন আল্লাহর রহমতে তার খুবই ভালো অবস্থা।”
একই মহল্লার বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, “ফারুক হোসেন বিদেশ থেকে যা আয় রোজগার করেছিলেন তা দিয়ে বোনদের বিয়ে দিয়েছেন আর বাড়ি করেছেন।”
অল্প সময়ে ব্যক্তিগত একাধিক গাড়িসহ বিপুল সম্পদ অর্জন প্রসঙ্গে ফরুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যায়ভাবে সম্পদশালী হইনি। পৈতৃক সূত্রে কিছু সম্পদ ছিল। ঠিকাদারি ব্যবসায় ভালো করায় সম্পদ বেড়েছে।”