কিশোরগঞ্জে ভূমি কর্মকর্তার মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ

কিশোরগঞ্জে এক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার সহকর্মী ও স্কুলের সহপাঠীরা।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2020, 12:32 PM
Updated : 13 Dec 2020, 12:50 PM

এই দাবিতে শনিবার ও রোববার ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ও কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্মসূচি পালন করেছে। 

গত ৬ ডিসেম্বর সকালে মোটরসাইকেলযোগে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হন ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আতিকুর রহমান (৪৬)।

পরে কিশোরগঞ্জ-চামড়াবন্দর সড়কে উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মনসন্তোষ এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। নিহত সৈয়দ আতিকুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নগুয়ার সৈয়দ আবু সাহিদের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে রোববার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, জেলা শাখা।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা সৈয়দ আতিকুর রহমানের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার প্রচারকে সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে ঘটনাটিকে পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড দাবি করেন এবং অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি জ্যোতির্ময় রায়, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সেলিনা ইয়াসমিন এবং কার্যকরী সদস্য এস এম হাফিজুর রহমান।

এছাড়া, দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহত আতিকের মা সৈয়দা খায়রুন্নেছা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচার করতে হবে।”

আতিকের ছোটো ভাই সৈয়দ আহসান আদিল এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া মেয়ে এবং আমার বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সবাইকে জানতে দিন আতিক কীভাবে মারা গেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মেয়ে সৈয়দা লিথিয়া রহমান লিতুসহ আয়োজক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আতিকের সহপাঠী বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম হামিম বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত ক্রমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

একই দাবিতে শনিবার কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি পালিত হয়।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আতিকের পরিবারের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া দুর্ঘটনাকবলিত কিশোরগঞ্জ-হ ১২-৬০১৭ নম্বরের হিরো মোটরসাইকেলটি সৈয়দ আতিকুর রহমানের নয়। তিনি নিজের টিভিএস মোটরসাইকেল (কিশোরগঞ্জ-হ ১২-২৬২৬) নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে কর্মস্থল ইটনা উপজেলার বাদলায় যাচ্ছিলেন। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করার পর করিমগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ওইদিন বিকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে অন্য এক স্থান থেকে সৈয়দ আতিকুর রহমানের টিভিএস মোটরসাইকেলটি অক্ষত উদ্ধার করে।

এছাড়া শুধু মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত সৈয়দ আতিকুর রহমানের প্যান্টের বেল্ট ছিল না। তার নিথর দেহের কিছুটা দূরে বেল্ট পড়ে রয়েছে।

সৈয়দ আতিকুর রহমান নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা সৈয়দ আবু সাহিদ করিমগঞ্জ উপজেলার সূতারপাড়া ইউনিয়নের পুরান চামটা গ্রামের সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবককে আসামি করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আইনে করিমগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার এসআই ফখরুল হাসান ফারুক বলেন, সংঘটিত ঘটনায় সন্দেহ করার মতো অনেক উপাদান রয়েছে। উক্ত ঘটনাগুলির কারণেই ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহ দানা বাঁধে। পরে পুলিশ তদন্ত করে দুর্ঘটনা কবলিত হিরো মোটরসাইকেলের চালক হিসেবে মামলায় উল্লেখিত আসামি সাইফুল ইসলামকে শনাক্ত করে। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এসআই ফখরুল হাসান ফারুক জানান, এই ঘটনায় সন্দেহ করার মত অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করা যায় অভিযুক্তকে আটকসহ দ্রুতই সব রহস্যের সুরাহা সম্ভব হবে।