গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় অতি দরিদ্রের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
Published : 05 Oct 2020, 08:30 PM
রাতইল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বিল্লাল শেখ ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার আলিম আল মোরশেদের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতদরিদ্র নুর ইসলাম শেখ, খবির খান, ভানু বেগম, সাহেব আলী খান ও শ্যামলা বেগম এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই ঘটনায় ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১০ টাকা মূল্যের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের তালিকাভূক্তির জন্য অভিযোগকারীরা ২০১৭ সালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইউপি সদস্য বিল্লাল শেখের কাছে জমা দেন। বিল্লাল শেখ তাদের না জানিয়ে তাদের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ইস্যু করেন। ইউপি সদস্য ডিলারের সঙ্গে যোগসাজসে দীর্ঘ তিন বছর ধরে তাদের কার্ডের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন।
গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে তারা বিষয়টি জানতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরে তারা ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে ইউপি সদস্যের চাল আত্মসাতের বিষয়টি নিশ্চিত হন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম দেখে তারা তাদের নামের চাল উত্তোলনের জন্য ডিলারের কাছে যান। সেখানে গিয়েও তারা তালিকায় তাদের নাম দেখতে পান। কিন্তু এ নামের চাল উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে বলে ডিলার তাদেরকে জানান।
অভিযোগকারী সাহেব আলী খান বলেন, “১০ টাকা কেজি দরের চালের তালিকায় আমাদের নাম আছে; কিন্তু তা আমরা জানতাম না। কিছুদিন আগে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের নামে কার্ড আছে। আমরা ডিলারের কাছে চাল আনতে যাই। ডিলার আমাদের বলে আপনাদের নামের চাল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে।”
আরেক অভিযোগকারী শ্যামলা বেগম বলেন, “আমাদের মতো আরও অনেকের নাম তালিকায় থাকলেও তারা চাল পায়নি। এজন্য আমরা কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।”
গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) হাচান মিনা বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৬ জন সুবিধাভোগীর নামের একটি তালিকা দেওয়া হয়। এদের সকলকে ইউনিয়ন পরিষদে আসার জন্য বলা হয়। চাপ্তা মধ্যপাড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ইউপি পরিষদে এসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাদের নাম দেখে অবাক হয়ে যান। তারা গত তিন বছর ধরে জানতেন না খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।”
ইউপি সদস্য বিল্লাল শেখ বলেন, “যে কার্ডগুলো নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সে কার্ডগুলো আমি করিনি। কে বা কারা করেছে তা আমি জানি না। এসব কার্ড সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাই এসব কার্ডের চাল আমি আত্মসাৎ করার প্রশ্নই ওঠে না।”
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার আলিম আল মোরশেদ চাল আত্মসাতের কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমি এ পর্যন্ত ২৬২ জনের মাঝে চাল বিতরণ করেছি। তবে কে কে চাল নিয়েছে আমি দেখিনি। বঞ্চিতরা আমার কাছে এসেছিল। তবে এসব কার্ডের চাল এবার অন্য কেউ নিতে আসলে আমি তাদেরকে আটকে দেব।”
ঘটনার সঙ্গে মেম্বাররা জড়িত থাকতে পারে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যেমন আমার ওয়ার্ডের মেম্বার এরকম কয়েকজনকে চাল খাওয়াতেন। আমি বিষয়টি জানতে পেরে সেসব কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছি।”
রাতইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি. এম. হারুন অর রশিদ পিনু বলেন, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ডিলারের। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারের কী করার আছে?”
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বঞ্চিতদের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করব। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”