ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগে খোলা এলসির পেঁয়াজ নিয়ে সীমান্তের ওপারে আটকে আছে বহু ট্রাক; পেঁয়াজে পচন ধরলেও সেগুলো বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে না।
Published : 18 Sep 2020, 02:06 PM
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার যখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা এল, তখন পেট্রাপোল বন্দরে পেঁয়াজবোঝাই পাঁচটি ট্রাক আটকা পড়ে।
“এসব ট্রাকের গেটপাস থাকলেও এখন আর এপারে আসার অনুমতি দিচ্ছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।”
এছাড়া বনগাঁয় আরও ৩৯টি ট্রাক এবং রানাঘাট রেলস্টেশনে তিনটি রেল ওয়াগন পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্তত এক সপ্তাহ আগে রেলের এই পেঁয়াজগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে রানাঘাট স্টেশনে আনা হয়।
ওয়াগনগুলো সরাসরি বেনাপোলে আসবে না; সেখান থেকে ট্রাকে তুলে বেনাপোল আনার কথা ছিল। কিন্তু ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর সেগুলো আটকা পড়ে বলে জানান সাজেদ।
তিনি বলেন, “আটকে থাকা এসব পেঁয়াজে পচন ধরেছে। দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে বলে রপ্তানিকারকরা আমাকে জানিয়েছেন।"
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ওপারেও এরকম প্রায় ২০০ ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে আটকে আছে বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।
হিলি এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক মণ্ডলের বরাতে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেসব ট্রাকে প্রায় দশ কোটি রুপির পেঁয়াজে পচন ধরার অবস্থা হয়েছে।
বাংলাদেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলার মূল্যে ৭৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঋণপত্র (এলসি) দেওয়া আছে তাদের। কিন্তু গত সোমবার মাত্র এক ট্রাক পেঁয়াজ বেনাপোলে ঢোকার পর বন্ধ হয়ে যায়।
“এখন বন্দর এলাকায় থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলোর বিষয়ে তারা দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না নিলে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। তাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জি বলেন, কী পরিমাণ পেঁয়াজের ট্রাক আটকে আছে তা তারা দিল্লিকে জানিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও তারা পাননি।
নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত সরকার গত সোমবার আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণার পর সীমান্তে বাংলাদেশ অভিমুখী পেঁয়াজের ট্রাকগুলোও আটকে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার গতবছরের মতই লাগামহীন হয়ে উঠতে শুরু করে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম রাতারাতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। দাম আরও বাড়ার শঙ্কায় মানুষও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনতে শুরু করে।
ওপারের ব্যবসায়ীদের বরাতে বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে তাদের আপত্তি নেই। বাজার দরে এলসি পেলে তারা আবার রপ্তানি শুরু করবেন।
“তারা বলছেন, প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলার দরে আগে যেসব এলসি খোলা হয়েছিল, তা সংশোধিত মূল্যে এবং নতুন এলসি ৭৫০ ডলার দরে করা হলে পেঁয়াজের আমদানি প্রক্রিয়া স্বভাবিক হতে পারে।”
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আগের এলসির পেঁয়াজ ওপারের বন্দরে আটকে থেকে নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে আমিনুল বলেন, “রোদ-বৃষ্টি, গরমে পেঁয়াজে পচন ধরেছে; দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। অনেকে ট্রাক সরিয়ে নিচ্ছেন আনলোড করার জন্য।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেও পেঁয়াজ নেওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। তবে এখন পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দর আমাদেরকে কিছু জানায়নি।”