ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে। ৫৬টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে।
প্রবল বর্ষণ্ ও উজানের ঢলে দুই সপ্তাহ আগে উত্তরের নদ-নদীগুলোয় পানি বেড়ে বন্যা দেখা দেয়। তখন থেকে কুড়িগ্রামসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্লাবিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শুরু হয়।
এর মধ্যে কয়েকদিন আগে পানি কিছুটা কমলে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু পানি আবার বাড়তে শুরু করায় দুর্ভোগ রয়েই গেল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেযে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, দুধকুমর নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়।
“ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।”
এর মধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিরাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাঙ্গারচরের বাসিন্দা দারোগ আলীর পরিবার ১৭দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। প্রথমদফা বন্যার পানি উঠোনে থাকা অবস্থায়ই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পরে সড়কে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
দারোগ আলী (৪৫) ও তার স্ত্রী হালিমা (৩৫) জানান, তাদের সাত সন্তান। বন্যার কারণে ১৭ দিন ঘরছাড়া।
দারোগ আলী বলেন, “প্রথম দফায় ১০ কেজি চাল পেয়েছি। তা শেষ হয়ে গেছে। এখন নাবালক শিশুদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আপনারা একটু দেখবেন।”
মহাসড়কে আশ্রয় নেয়া আরেক পরিবারের সদস্য হলেন শহিদুল (৪৫) ও তার স্ত্রী মেরিনা (৩৪)।
শহিদুল বলেন, “প্রথম দফা বন্যায় বাড়ি ছেড়ে ১০ দিন এখানে ছিলাম। পরে পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত বাড়িঘর ঠিক করে দুটো রাত ঘুমুতে না ঘুমুতে আবার বন্যা। কামকাজ নাই। কেউ ত্রাণও দিল না। এখন কার কাছে হাত পাতি!”
এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ আনোয়ারা বলেন, “ছবি তুলি কী হইবে। হামাকগুলাক কাঁইয়ো কিছু দেয় না। এটে কাঁইয়ো খোঁজখবর নিবারো আইসে না।”
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বীজতলার। এই পানি বেশি দিন অবস্থান করলে বীজতলাসহ বন্যা কবলিতরা খাদ্য সমস্যায় ভুগবে।”
এই মূহূর্তে বন্যা কবলিতদের উদ্ধারসহ ত্রাণ সহায়তা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪শ মেট্রিক টন চাল, আট লাখ জিআর ক্যাশ, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, দুই লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে; যা দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হবে।