করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় ধান কাটার এই মৌসুমে শ্রমিকদের যাতায়াতেও ছেদ পড়েছে। এ কারণে বোরো চাষিদের ধান কাটতে দূরদূরান্ত থেকে শ্রমিক আসতে পারছে না প্রতিবছরের মতো।
Published : 12 Apr 2020, 09:02 PM
মুন্সীগঞ্জ জেলার আড়িয়ল বিলের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার একর জমির ধান কাটা নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে শঙ্কায় দিন গুণছে কৃষকরা। শ্রমিক না পেলে কীভাবে এত ধান কেটে ঘরে তুলবে তার হিসাব মেলাতে পারছে না তারা।
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রায় ২৬ হাজার একর আয়তনের আড়িয়ল বিলের অন্তত ২৪ হাজার একরে ধান চাষ হয়। প্রতিবছর ধান উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ধান কাটা শুরু হয়ে তা ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। তা না হলে বৃষ্টি শুরু পর বিলের অধিকাংশ জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
গত শুক্র ও শনিবার বৃষ্টি হওয়ায় আড়িয়ল বিল এলাকার শ্রীনগর, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, মত্তগ্রাম, মুন্সীরহাটি, ষোলঘর, সমসাবাদ, কেয়টখালী, মাইজপাড়া, হাঁসাড়া লস্করপুর, পুটিমারা, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, কালাইমারা, মরিচ পট্টিসহ বিলপাড়ের কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ভাড়ি বৃষ্টিপাতে বিলের ধান তলিয়ে যেতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
একই এলাকার ওয়াসেক ঢালী বলেন, বছরের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়িয়ল বিলের ধান কাটতে শ্রমিকরা শ্রীনগর এসে জড়ো হয়। ছোট চাষীরা সেখান থেকে দিন মজুরী ও ৩ বেলা খাবারের বিনিময়ে ৪-৫জন করে শ্রমিক এনে ধান কেটে ঘরে তুলে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এবার আর এই সুযোগ নেই। কিন্তু ধানতো ঘরে তুলতে হবে।
মুন্সীরহাটি গ্রামের বর্গাচাষি সোহরাব শেখ বলেন, “সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধার-দেনা করে সার, নিড়ানি, কীটনাশকের টাকা জোগাড় করেছি। প্রায় দিনই জমিতে গিয়ে ফলন দেখে আসতাম। এখন বাড়িতে বসে বিলের পাকা ধান দেখি। এই ধান কীভাবে কাটব! ধান ঘরে তুলতে না পারলে ধার শোধ করব কীভাবে, আর সারা বছর সংসারইবা চালাব কীভাবে তা চিন্তায়ই আসে না।”
বাড়ৈখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কায়সার আহমেদ রনি বলেন, “বিলে তার অনেক জমি রয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা এসব জমিতে ধান চাষ করেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তারা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। সরকার তাদের শ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে মানুষগুলো বাঁচতে পারবে।”
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশে প্রায় ৯ হাজার ৬শ একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখানে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।
শ্রীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এমনিতেই খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তার উপর আড়িয়ল বিলের ধান কৃষক ঘরে তুলতে না পারলে এই অঞ্চলে খাদ্য সংকট আরও প্রকট হতে পারে। ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা চলছে। ধান কাটার জন্য শ্রমিক আনার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।