নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে পত্রিকার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানোর গুজবে শেরপুরে পত্রিকা বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসছে; বাড়ি বাড়ি পত্রিকা নিয়ে গেলে এখন অনেকেই এখন ‘বিরক্ত হন, ধমক’ দেন বলে হকাররা জানিয়েছেন।
Published : 29 Mar 2020, 11:27 AM
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি ছুটি ঘোষণা ও লোকজনকে ঘরে থাকার আহ্বানে সারাদেশের মত শেরপুরেও স্বাভাবিক জীবনের ছবিটা বদলে গেছে। দোকানপাট সব বন্ধ। সড়কে চলছে না কোন যানবাহন। ফলে বেনাচেনা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
জেলার পত্রিকার এজেন্ট ও হকারর বলছেন, এ আপদ কাটাতে সবাইকে ঘরে থাকার বলা হলেও সংসার চালাতে, পরিবারের লোকদের জন্য অন্ন জোগাতে ভয় আর আতঙ্ক উপেক্ষা করেই প্রতিদিন তাদের ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না; বন্ধ দোকানপাটও। ফলে পত্রিকার কেনার জন্য আগের মতো কেউ আসছে না।
করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে হওয়ায় হকারের মাধ্যমে আসা সংবাদপত্র অনেকে আবার নিতে চাচ্ছেন না; এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে যে- ঢাকা থেকে আসা পত্রিকায় করোনাভাইরাস রয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সব জাতীয় দৈনিকগুলোর বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকরও কম।
হকাররা জানান, তারা আগে প্রতিদিন ২০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতে পরতেন; এখন ৫০/৬০টির বেশি বিক্রি করতে পারছেন না।
হকার হালিম মিয়া বলেন, “আগে ১০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতাম। এহন ৪০/৫০টি বিক্রি করি। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ভয় পায়, এই ভাইরাস বলে পত্রিকার মধ্যেও আছে এ ধরনের গুজব ছড়াইয়া মানুষ অহনা পত্রিকা নিতে চায় না।”
হকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “করোনা ভাইরাস আতঙ্কে অহন কেউ পত্রিকা নিতে চায় না। পত্রিকা বন্ধ কইরা দেওয়াই দরকার।”
হকার মাসুদ রানা বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দোকানপাট, অফিস সব বন্ধ। এহন পত্রিকা চলে না। আগে ২০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতাম। এখন ৫০ কপি নিয়া যাই তাও ফেরত আসে। দোকানপাট সব বন্ধ, মানুষ পত্রিকা পড়ে না। আর লোকজন বলাবলি করে- সংবাদপত্রের সঙ্গে ভাইরাস আসে ঢাকা থেকে। এ জন্যে পত্রিকা বন্ধ কইরা দেওয়াই ভালা।
“আমাগোর পরিশ্রম, হুদাই আসা-যাওয়া করা। মানুষের সামনে গেলে বলে তোমরা পত্রিকা বেঁচো কেন। তোমাদের জীবনের ভয় নাই? পত্রিকা দিও না। কাস্টমার আরও ধমক দেয়। ”
হকার আব্দুল হালিম ও রেজাউল করিম বলেন, এখন লোকজন পত্রিকা পড়ে না -ফলে ৫০ থেকে ৬০ কপির বেশি পত্রিকা তারা বিক্রি করতে পারছে না।
শেরপুর টাউনের পত্রিকার এজেন্ট বাবুল মিয়া বলেন, আগে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হত তিন হাজার। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে এখন তা ১৩/১৪শ’তে নেমে এসেছে। পত্রিকা বিক্রি হচ্ছে না। বাসাবাড়িতে গেলেও মানুষ পত্রিকা নিতে চায় না। আর পত্রিকা বিক্রি না হওয়ায় হকাররা পত্রিকা নিতে চায় না।
এজেন্ট শুভাশীষ সাহা রায় বলেন, “শেরপুরে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সার্কুলেশন অর্ধেকে নেমে এসেছে। দোকানপাট বন্ধ। সেলসম্যান ও স্টাফরা আসে না। ”
এদিকে করোনা ভাইরাসের রোধে সরকরি ছুটিতে সব বন্ধ থকায় নিত্য খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না; তাই শ্রমিকদেরও কাজকর্ম নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে হলেও কাজকর্ম না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। রাস্তায় মানুষ নেই। রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী না পেয়ে হতাশ রিকশা চালকরাও।
শেরপুর টাউন হলে কথা হয় বালুটানা শ্রমিক ওজুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, “কাম কাজ নাই। তারপর সব কিছুই বন্ধ। করোনাভাইরাসের ভয় আছে। কিন্তু পেডো ভাত তো দিওন লাগব। টাউনও আইতাছি-যাইতাছি, কিন্তু কাজ না পাইয়া পরিবার নিয়া খুউব কষ্টে আছি। ”
রিকশা চালক আরমান মিয়া বলেন, “রিকশা নিয়া বের হইছি, কিন্তু রাস্তায় কোনো লোকজন নাই। ভাড়া নাই। মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘর থাইকা বাইরেই বাড়াইতাছে না।”