জাতীয় সঞ্চালন লাইনের নিচে স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ হলেও তা মানছে না অনেকেই। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কোন ক্ষমতা নাই বলছে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ।
Published : 27 Jan 2020, 03:39 PM
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাবাড়িয়ায় বিশ্বরোডের মোড়ের কাছে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ‘সেলিনা খানম সুপার মার্কেটের’ দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ কাজ করার সময় উচ্চক্ষমতার সঞ্চালন লাইনের স্পৃষ্ট হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইলেকট্রিশিয়ান জাকারিয়া আহমেদ বকুল (৪৭) মারা যান।
২০১৪ সালে আনুমানিক দশ শতাংশ জমির উপর এ ভবন নির্মাণ শুরু হয়।
সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এ ভবনের নিচ তলায় ৫/৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। বর্তমানে এ মার্কেটের দ্বিতীয় তলা নির্মাণ কাজ চলছে। দ্বিতীয় তলার ছাদের মাঝ বরাবর মাত্র ৩/৪ ফুট উপর দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের দিকে চলে গেছে পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ হাজার ভোল্টের সঞ্চালন লাইন।
এ ছাদে ‘বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং’ করার সময় ‘দুর্ঘটনাবশত’ ওই সঞ্চালন লাইনের সংস্পর্শে মারাত্মক দগ্ধ হন ইলেকট্রিশিয়ান জাকারিয়া।
নিহতের ছোট ভাই বাবুল স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, সেদিনই তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চারদিন পর ১৯ জানুয়ারি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় এ মার্কেটের মালিক মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পারিবারিকভাবে চিন্তা ভাবনা চলছে বলেও জানান তিনি।
আগেও এ ধরণের দুর্ঘটনায় অনেকে হতাহত হয়েছেন উল্লেখ করে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, এখনই যদি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তৎপর না হয় এবং সরকার শাস্তির বিধান না করে তবে বকুলের মত আরো অনেকেই প্রাণ হারাতে থাকবেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঠিকমত নজরদারি করে না অভিযোগ তুলে স্থানীয় লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, যথা সময়ে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিলে হয়ত এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটত না।
“তাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে আরও তৎপর হতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মনির উদ্দিন মজুমদার বলেন, “স্বল্প জনবলের কারণে শত শত মাইল লাইনের প্রতিটা স্থান নিয়মিত নজরদারি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।”
উদ্বেগের বিষয় এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাই।
ফলে অবৈধ স্থাপনা নজরে এলে ‘মৌখিক ও লিখিত’ নোটিশ দেওয়া ছাড়া তাদের করার আর কিছু থাকে না। এক্ষেত্রে জানমালের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে জমির মালিকদের সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মো. ফেরদৌস বলেন, “দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের আদালতে এসে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মুলক প্রতিকার চাওয়ার এবং আইন অমান্য ও গাফিলতির জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করে মামলা দায়েরের আইনগত অধিকার রয়েছে।”