গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিকভিটায় স্মৃতি রক্ষার দাবি জানিয়েছে তার স্বজন ও গ্রামবাসী।
Published : 13 Nov 2019, 10:37 AM
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ডাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। নূর হোসেন বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় ঢাকার জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। বুকে পিঠে লেখাসহ তার ছবি হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক।
স্বৈরাচার বিরোধী এই শহীদের পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাঁটিবুনীয়া গ্রামে। তার স্মৃতি রক্ষায় সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে না ওঠায় আক্ষেপ করেছেন নূর হোসেনের স্বজন ও গ্রামবাসী।
নূর হোসেনের চাচাত ভাই মো. রুহুল আমীন হাওলাদার স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। তিনি নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় বাস করেন।
তিনি জানান, নূর হোসেনের বাবা মজিবর রহমান দেশ স্বাধীনতা হওয়ার আগেই কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি অটোরিকশা চালাতেন তবে নিয়মিত গ্রামে আসতেন। নূর হোসেনও গ্রামে আসত।
চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় নূর হোসেন জন্মেছেন ঢাকায়। তার ভাই-বোন আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও বোন শাহানা বেগম স্থায়ীভাবে ঢাকায় বাস করেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমার ভাই গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিছে। তবে জন্মভিটায় শহীদ ভাইয়ের স্মৃতি সুরক্ষায় কোন ব্যবস্থা হইল না।
“শহীদ ভাইয়ের নামে একটা এবতেদায়ী মাদরাসা করছিলাম পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।”
মাদ্রাসাটা চালু করার পাশপাশি গ্রামে একটি পাঠাগার ও শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতিতে একটি স্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
১৯৯২ সালে গ্রামের কয়েকজন তরুণ মিলে নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ গড়ে তোলেন। গ্রামে তরুণরাই নূর হোসেন দিবসটি পালন করে আসছে।
এ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোক্তা মো. নূরুল আমীন রাসেল জানান, নূর হোসেনের বাবা-চাচারা পাঁচ ভাই। নূর হোসেনের বাবা মজিবর রহমান হাওলদার ২০০৫ সালে মারা যান। এছাড়া তার অপর তিন ভাইও মারা গেছেন।
“শুধু নূর হোসেনের ছোট চাচা লাল মিয়া হাওলাদার বেঁচে আছেন। তিনি রাঙামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
“গ্রামে নূরে হোসেনের বড় চাচার সন্তানরা ছাড়া কেউ থাকেন না।”
রাসেলও শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও একটি পাঠাগার নির্মাণের দাবি জানান।
সাপলেজা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়া মনে করেন নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতিরক্ষা করা হলে আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শহীদ নূর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। তার জীবনদানের ইতিহাসে আমরা গর্বিত। তবে তার স্মৃতি রক্ষায় পৈত্রিক ভিটে মাটিতে কোন কিছু গড়ে ওঠেনি।
তিনিও পৈত্রিক ভিটায় নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষার দাবি জানান।
প্রতি বছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হন সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ করা হয়েছে নূর হোসেন চত্বর। তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশও করেছে ডা্ক বিভাগ।