টানা আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ক্যাম্পাস ত্যাগকে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছেন তার পতনের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
Published : 30 Sep 2019, 05:07 PM
তবে ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুততম সময়ে উপাচার্যকে প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
সোমবারও শিক্ষার্থীরা ভিসি পতনের আন্দোলন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের অবস্থান মঞ্চের অবস্থান নিয়ে ভিসি বিরোধী শ্লোগান দেন। এনিয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন ১২ দিনে গড়ালো।
তদন্তে দোষ পেয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
তাদের এই প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন উপাচার্য নাসির।
রোববার রাত ৯টার কিছুক্ষণ পর কড়া পুলিশ পাহারায় নিজের কোয়ার্টার থেকে গাড়িতে করে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তিনি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন বলে গোপালগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ‘অনিয়মের’ নানা ঘটনায় আলোচিত এই উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগের সময় শিক্ষার্থীরা উল্লাস করে। তবে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি সেখানে। অনেকটা নির্বিঘ্নেই তিনি চলে যান।
উপাচার্য নাসিরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিকস্খলনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছিল ইউজিসি।
গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ইউজিসির তদন্ত কমিটি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। গোপালগঞ্জে গিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন জমা দেন তারা।
ওই প্রতিবেদনে উপাচার্যকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অবস্থা, সেখানে উপাচার্যের কী ভূমিকা, দায় কার- তা রয়েছে প্রতিবেদনে।
“বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বর্তমান ভিসির পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আর সম্ভব হবে না বলে মনে করে কমিটি।”
সংবাদ সম্মেলনে ভিসি নাসিরের ক্যাম্পাস ত্যাগেকে তাদের প্রাথমিক বিজয় উল্লেখ করে ইউজিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভিসি নাসিরের দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।
ভিসির ক্যাম্পাস ত্যাগের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “তার অসুস্থতার কথা আমাদের জানানো হয়েছে। ডাক্তার দেখানোর জন্য সম্ভবত তিনি ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্তিতি এড়াতে পুলিশ প্রটোকল নেওয়া হয়েছিল।”
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্ত বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়তা দে গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “ভিসি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। এটা আমাদের আন্দোরনের প্রাথমিক প্রাপ্তি। এটা সত্যিই আনন্দের। তবে ভিসি প্রত্যাহার হলেই আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। গণমাধ্যম ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছি। গণমাধ্যম সজাগ থাকলে ভিসির শেষ রক্ষা হবেনা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা আশা করব ভিসি নাসিরের পদত্যাগের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে খুব দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। ”
এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার প্রফেসর নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা তো এ রিপোর্ট পাবো না। ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।”
এটির চূড়ান্ত রূপ পেতে আরও অনেক কাজ বাকী আছে। ইউজিসির প্রতিবেদন বাস্তবায়নে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
একটি ফেইসবুক পোস্টের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সময়িক বহিষ্কার করার পর উপাচার্য নাসিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে ওই শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই ছাত্রীকে বকাঝকা ও হুমকি-ধমকি দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। মেয়েটির বাবাকে নিয়েও তীর্যক মন্তব্য করেন তিনি।
এই অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে উপাচার্যের সমালোচনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়। বিক্ষোভের মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসি পতন আন্দোলন শুরু করে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের সমর্থক বাহিনী হামলা চালালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি তদন্তে নামে ইউজিসি।