আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক জলসা বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড় শহরে ব্যাপক হামলা-ভাংচুর চালিয়েছে খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের অনুসারীরা।
Published : 13 Feb 2019, 09:18 AM
পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসন জলসার অনুমতি বাতিল করলেও মঙ্গলবার রাতে শহরের আহমদনগর এলাকার আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালানো হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ব্যবহার করতে হয় পুলিশকে।
হামলা-সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অন্তত ২১ জনকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রদীপ কুমার বণিক জানিয়েছেন।
আহমদিয়া মুসলিম জামাত ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি আহমদ নগর এলাকায় তিন দিনের বার্ষিক সালানা জলসা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু ওই জলসা বন্ধের দাবিতে খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, ইসলামী যুব সমাজ ও স্থানীয় তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই আন্দোলনে নামে।
এই প্রেক্ষাপটে পঞ্চগড়ের স্থানীয় প্রশাসন সমঝোতার চেষ্টায় দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্দেলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে জলসার সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানানো হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আক্কাস আহমদ জানান, জেলা প্রশাসন জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও আন্দোলনকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক ও বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে রাত রাত ৯টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওই সড়কগুলোতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। আতঙ্কে পঞ্চগড় বাজারের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
রাত সোয়া ১১ টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম আজম পঞ্চগড় বাজার জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জলসার অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কারো ‘প্ররোচনায়’ বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তখন শহরতলীর আহমদ নগরে গিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আহমদিয়াদের ঘরবাড়ি ও জলসাস্থলে হামলা চালায় বলে জানান ওসি আবু আক্কাস।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে।
আহমদনগর মুসলিম জামাতের সভাপতি তাহের যুগল অভিযোগ করেন, প্রায় দুই ঘণ্টার তাণ্ডবে তাদের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। বাড়ির মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ।
হামলার ঘটনার পর রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ পরিদর্শক মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দীন আহম্মদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের দেখতে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে যান।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও বিক্ষোভ করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এজন্য তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থি হামলার শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালে রাজশাহীর বাগমারায় এ সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত হন। মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম আহমদিয়াদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে।