কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল কালোবাজারে বিক্রির নিয়ে সংঘর্ষে গুলি ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
Published : 12 Apr 2018, 09:14 PM
তালিকাভুক্তদের চাল না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে ডিলার তোতা প্রমানিক ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছুক্কুর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে রাজিবপুর থানার এএসআই আব্দুল মান্নান জানান।
আহতদের মধ্যে বিপ্লব রহমান (২৬) ও মাহফুজুর রহমানকে (২৫) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আহতদের মধ্যে একজনের মাথায় গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ডিলার তোতা প্রমানিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি কোদালকাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে চাল দেওয়া নিয়ে কামাল হোসেন নামের এক ইউপি সদস্যকে মারধর করে চাল ডিলারের লোকজন। এ ঘটনার তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে ডিলারের লোকজন পরিষদে গিয়ে তাদের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছুক্ককে নাজেহাল করেন।
পরে চেয়ারম্যানের লোকজন সেখানে গেলে দুপক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে চেয়ারম্যানের ভাতিজা বিপ্লব রহমান (২৬) ও মাহফুজুর রহমান (২৫) গুরুতর আহত হয় বলে জানান তারা।
এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা এএসআই আব্দুল মান্নানসহ চার পুলিশকে এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করে ডিলার তোতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। ঘণ্টা খানেক পর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার এবং তোতাকে গ্রেপ্তার করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান পক্ষ বিক্ষোভ মিছিলসহ ডিলারের স্বজন আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামাল বলেন, তার ওয়ার্ডে ২৬২ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। ডিলার সবার কার্ড তার হেফাজতে রেখে মার্চ-এপ্রিলের চাল একসঙ্গে দেবে বলে জানায়।
“সুবিধাভোগীরা গেলে ডিলার তাদের চাল না দিয়ে ফেরত পাঠায়। পরে আমি তাদের সঙ্গে সেখানে গেলে ডিলার তোতা প্রমানিক ও তার ভাইরা আমাদের মারধর করে।”
ডিলার তোতা সুবিধাভোগীদের নামের দুই মাসের বরাদ্দ চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছুক্কু বলেন, ডিলার তোতা প্রতিবারই সুবিধাভোগীদের নামের চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে একাধিকবার তাকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে।
“চাল না দেওয়ায় সুবিধাভোগীরা আমার কাছে আসে। এ অবস্থায় ডিলারকে সুবিধাভোগীদের চাল দেওয়ার জন্য বললে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের সামনে আমাকে নাজেহাল করে এবং লোকজনের ওপর পাইপগানের চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে।”
চাল বিক্রির কথা অস্বীকার করে তোতা প্রমানিক বলেন, “বুধবার চাল বিতরণের সময় কামাল মেম্বার এবং চেয়ারম্যানের কিছু চেলা-চামচা আমাকে বাধা দিয়ে তাদের আলাদা সুবিধা দিতে বলে। এতে রাজি না হলে তারা কয়েক বস্তা চাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
“আমার লোকজন বাধা দিতে গেলে ওই হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান আরও লোকজন নিয়ে আবারও চাল বিতরণে বাধা দিলে সংঘর্ষ।”
চেয়ারম্যানের লোকজন তার ভগ্নিপতির বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বীপঙ্কর রায় বলেন, “ওই ডিলারের কালোবাজারে চাল বিক্রির বিষয়টি চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমাকে জানিয়েছে। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
রাজিবপুর থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, “সংঘর্ষ আর গুলির ঘটনা আমিও শুনেছি। সে কারণে ডিলার তোতা প্রমানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।