মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী রংপুরের আইনজীবী রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনার সন্ধানে বাড়ির পাশের ডোবায় তল্লাশি স্থগিত করা হয়েছে।
Published : 04 Apr 2018, 12:16 AM
আলো না থাকার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা স্থগিতের কথা জানিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধবার সকালে ফের শুরু হবে তল্লাশি।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রথীশ জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন।
গত শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে রথীশের কোনো সন্ধান না মেলার মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর থেকে তার বাড়ির পাশের ডোবাটিতে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
রথীশের চাচাত ভাই লিটন ভৌমিকের গোয়াল ঘরের পাশের আট-দশ ফুট গভীর এই ডোবায় গোবরসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ছিল।
ওসি বাবুল মিঞা বলেন, “বালতি দিয়ে ডোবার পানি ও ময়লা তোলা হচ্ছিল। তল্লাশির এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ডোবার পাশে আবর্জনার নিচে হালকা রক্তের ছিটা লাগানো সাদা একটি শার্ট পাওয়া যায়।”
এনিয়ে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাতে থাকলে শার্টটি স্থানীয় মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়।
পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সাদা রঙের শার্টটি পুরনো। তবে সেটি রথীশচন্দ্রের নয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।”
রথীশচন্দ্রের ছোট ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক সুবল বলেন, “শার্টটিতে রক্তের ছিটার মতো লেগেছিল। তবে সেটি ভাইয়ের নয়।”
রংপুর শহরের বাবুপাড়ায় রথীশের বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন।
২ স্কুলশিক্ষক আটক
রথীশ নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই স্কুলশিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
ওসি বাবুল মিঞা জানান, আটক শিক্ষক কামরুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
সোমবার রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হলেও বিষয়টি গোপন রেখেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে তা প্রকাশ পায়।
রথীশচন্দ্র তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদা খাতুন নিশ্চিত করেছেন।
দুই শিক্ষককে নিয়ে রথীশ নিখোঁজের ঘটনায় ১১জনকে আটক করল পুলিশ। সোমবার ভোরে নগরীর ডিমলা কানুনগোটলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়জনকে আটক করা হয়।
রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সে তথ্য ধরেই আমরা কাজ করছি। উদ্ধারে বিলম্ব হলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।”
শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে নগরীর বাবুপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে শহরের দিকে যান রথীশ। এরপর থেকে তার সন্ধান নেই।
রোববার রথীশের ছোট ভাই সাংবাদিক সুশান্ত বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। তবে এতে কাউকে আসামি করা হয়নি।
রথীশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
ট্রাস্টের নেতাদের সন্দেহ, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কিংবা জঙ্গি গোষ্ঠী কিংবা ভূমিদস্যুরা রথীশকে ধরে নিয়ে গেছে।
রথীশের সন্ধান দাবিতে আগামী শনিবার মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।