বাগেরহাটে কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নামে আমানত ‘আত্মসাৎ’

বাগেরহাটে ‘দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও জেলা সমবায় কার্যালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

অলীপ ঘটক বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2017, 06:08 AM
Updated : 25 Nov 2017, 06:26 AM

আর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ-সহকারী নিবন্ধক মো. আমান উল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তাদের দপ্তরে নিবন্ধিত।

“এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর এখতিয়ার নেই। তারা বেআইনিভাবে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির ৩০-৩৫ জন গ্রাহক বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট শহরের পত্রিকা বিক্রেতা ও ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক মোকাদ্দেস আলী লিখিত বক্তব্যে বলেন, পাঁচ বছর আগে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে শফি মার্কেটের তিনতলায় অফিস ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠান সাইবোর্ড ঝুলিয়ে কার্যক্রম শুরু করে।

“তারা এফডিআর, ডিপিএসের নামে বিভিন্ন আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে। ফিক্সড ডিপোজিটে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এই ফাঁদে পা দেয় বাগেরহাটের বিভিন্ন পেশার কয়েকশ মানুষ।

“ওই সময় বাসুদেব দে নামে এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিহাররঞ্জন হালদারকে ধরে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও তারা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার শিকারপুর গ্রামে। তিনি সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন শেখ নামে এক কর্মচারীকে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়েছেন।

“শহরের সাধনার মোড় এলাকা থেকে অফিস সরিয়ে বর্তমানে দশানী এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে বসে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন।”

মোকাদ্দেস আলী তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রথম চার মাসে ২৪ হাজার টাকা মুনাফা পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, “এখন তারা আর মুনাফাও দেয়া না, মূল টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।”

বাগেরহাট সদর উপজেলার পশ্চিমডাঙ্গা গ্রামের হাসিব হাওলাদার বলেন ২০১৬ সালে দুই দফায় ছয় লাখ জমা দেন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, “আমার দেখাদেখি বোন শাহীনুর বেগমও তিন লাখ টাকা জমা দেয়। প্রথম ছয় মাস আমি মাসে লাখে দুই হাজার করে মুনাফা পাই। কিছুদিন পরেই তারা টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করলে আমি আমার জমা রাখা টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তারা টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

“তাদের প্রলোভনে পড়ে আমরা শত শত গ্রাহক কয়েক কোটি টাকা তাদের দিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি।”

তিনি চলতি বছর ১৩ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেছেন জানিয়ে বলেন, “মামলাটি বিচারক আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু পুলিশ এখনও তাদের তদন্ত শেষ করতে পারেনি।”

এ প্রসঙ্গে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরীকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করলেও এ প্রসঙ্গ তুলতেই লাইন কেটে দেন।

প্রতিষ্ঠানটির বাগেরহাট শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. স্বাধীন বলেন, “সাবেক ব্যবস্থাপক নিহাররঞ্জন হালদার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। তবে তা আমাদের এখানে জমা না করে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকার হিসাব চাইলে তিনি গত অগাস্টে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা।”

তিনি গ্রাহকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছন।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, “কোনো প্রতিষ্ঠান বৈধ অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আামার কিছু জানা নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা আমার কাছে আসলে আমি তাদের আইনি সহযোগিতা করব।”

বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান বলেন, “কোনো অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানটির কী অনুমতি আছে বা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা অবহিত নই।”