সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় একটি বাড়ি ঘিরে অভিযানের মধ্যে পুলিশের আত্মসমর্পণের আহ্বানের জবাবে দেরি না করে তাড়াতাড়ি সোয়াট পাঠাতে বলেছে সন্দেহভাজন এক জঙ্গি।
Published : 24 Mar 2017, 02:37 PM
শিববাড়ি এলাকার ওই ‘জঙ্গি আস্তানা’য় চূড়ান্ত অভিযান চালাতে ঢাকা থেকে রওনা হওয়া সোয়াট ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা সিলেটের পথে রয়েছেন বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্তি কমিশনার রোকনউদ্দিন জানান, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পাঁচতলা ওই ভবনে অভিযানে গেলে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়।
এরপর থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে ওই বাড়ি থেকে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখে পুলিশ ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছে হ্যান্ড মাইক দিয়ে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ভবনের নিচতলার চার নম্বর ইউনিটে আস্তানা গেড়েছে জঙ্গিরা। তিন মাস আগে কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই বাসা ভাড়া নেন বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালা উস্তার আলী।
বেলা ১২টার পর সন্দেহভাজন ওই নারী জঙ্গির নাম উল্লেখ করে পুলিশের হ্যান্ড মাইকে বলা হয়, “মর্জিনা বেগম, আপনাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করুন।”
দফায় দফায় এভাবে আহ্বান জানানোর মধ্যে শাহ আলম নামে পুলিশের একজন এসআই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের উদ্দেশে মাইকে বলেন, “আপনারা মুসলমান, আমরাও মুসলমান। আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে মিডিয়ার ভাইয়েরা আছেন, আপনারা কথা বলুন।”
এ সময় ওই বাড়ি থেকে জানালা ফাঁক করে নারী কণ্ঠ জবাব দেন, “আপনারা শয়তানের পথে, আমরা আল্লাহর পথে।”
এর পরপরই আরেক পুরুষকণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে বলা হয়, “দেরি করছ কেন? আমাদের সময় কম। তাড়াতাড়ি সোয়াট পাঠাও।”
বাড়িওয়ালা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রেখেই তিনি কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগমকে ওই বাসা ভাড়া দিয়েছিলেন। সে সময় কাউছার নিজেকে প্রাণ কোম্পানির অডিট অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
ওই ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে যে পরিবারগুলো আটকা পড়েছে, তাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে ভেতর থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। ভবনটির দিকে যাওয়ার দুটি সড়কে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকে। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে দেখা গেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সশস্ত্র অবস্থান।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল মান্নান জানান, সিলেটে জঙ্গি আস্তানা থাকার তথ্য পাওয়ার পর তাদের সদস্যরা সিলেট পুলিশকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে শিববাড়ির ওই ভবনের সন্ধান পান তারা।
“ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে পুলিশ দূরে সরে গিয়ে ভবনটি ঘিরে ফেলে এবং পরে আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু হয়।”
ঢাকা থেকে গিয়ে সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা পৌঁছানোর পর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ হলেই ‘মূল অভিযান’ শুরু হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।