জয়পুরহাট সদর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যুগের পর যুগ চলছে মূলত একজন শিক্ষক দিয়ে। দাপ্তরিক কাজও ওই একজন শিক্ষককেই করতে হচ্ছে।
Published : 17 Mar 2017, 02:38 PM
জেলা শহর থেকে ২০-২২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিয়ে কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কল্যাণপুর গ্রামের নামে ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে রয়েছেন একজন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও বদলি হয়ে চলে যান।
তিনি বলেন, ১৯৫৭ সালে এলাকার কজন শিক্ষানুগারীরা ৪৯ শতক জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টি শিক্ষকের অভাবে রয়েছে।
“নূরুন্নাহার নামে এক শিক্ষক ১৯৭৮ সালে এখানে যোগ দেওয়ার পর তিনি ওই এলাকায় বিয়ে করে থিতু হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে অন্তত একজন শিক্ষক নিয়মিত ছিলেন। অন্যরা যোগ দিয়ে কয়েক মাস পরেই বদলি হয়ে যান।”
নূরুন্নাহার অবসরে যাওয়ার পর এখন সেই একজন শিক্ষকও আর নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এখন বিদ্যালয়টির একমাত্র শিক্ষক হচ্ছেন রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কোনো শিক্ষক এখানে আসতে চায় না। আসলেও তদবির করে চলে যায়।”
একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার পর দ্বিতীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে না দিতে ওই শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান বলে তারা জানান।
“হঠাৎ একদিন দেখা যাবে যে রেজাউল করিমও চলে গেছেন, এটাই এখানকার বাস্তবতা,” বললেন ওই গ্রামের ময়জুল হোসেন।
কামাল হোসেন চৌধুরীসহ গ্রামের অন্যরাও এমনটাই জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র কিরণের বাবা এরশাদ আলী বলেন, “আমরা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি, শিক্ষক আসে শিক্ষক যায়। কেউ বেশি দিন থাকে না।”
আর এই স্কুলের কোনো পিওন-দপ্তরিও কেউ নেই। সব বিষয়ের ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি একমাত্র শিক্ষক রেজাউল করিমকেই দাপ্তরিক কাজও করতে হয় বলে এলাকাবাসী জানান।
তবু এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফল করে বলে মনে করেন শিক্ষক রেজাউল করিম।
“২০১৬ সালে ১৭ জন পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে সবাই পাস করেছে। তাদের মধ্যে আবার এক ছাত্রী পেয়েছে জিপিএ-৫।”
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তারের অভিযোগ, “বারবার যোগাযোগ করার পরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। আমাদের কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ায় প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকসহ আরও কমপক্ষে তিনজন শিক্ষক প্রয়োজন।”
দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
স্থানীয়দের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।