এই দুজনের বদলে স্কোয়াডের ভারসাম্যের স্বার্থে অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন ও কিপার-ব্যাটসম্যান জশ ইংলিসকে বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা।
Published : 01 May 2024, 11:21 AM
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনও অভিষেক হয়নি জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের। তবু অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত খবর, তার নামটি নেই! দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট মাতিয়ে এখন আইপিএলেও তাণ্ডব চালিয়ে তিনি নজর কেড়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের। কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তাকে ঠাঁই দেওয়ার কোনো জায়গা পাননি অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা। এছাড়াও এক দশকের মধ্যে প্রথমবার কোনো বিশ্বকাপে দেখা যাবে না স্টিভেন স্মিথকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে যা একটু বিস্ময়, তা দলে না থাকাদের নিয়েই। দলে জায়গা পাওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার, কিপার-ব্যাটার জশ ইংলিশ ও অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন।
অনুমিতভাবেই দলকে নেতৃত্ব দেবেন মিচেল মার্শ। গত এক বছরে তিনটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। চোট নিয়ে আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়ে এখন তিনি সেরে ওঠার লড়াইয়ে আছেন।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা অবশ্য ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের না থাকা নিয়েই। গত অক্টোবরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৯ বলে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বে খবরের শিরোণামে উঠে আসেন ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
স্বীকৃত যে কোনো ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড সেটি। পরে বিগ ব্যাশে ২৫৭ রান করেন ১৫৮.৬৪ স্ট্রাইক রেটে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে করেন ঝড়ো ফিফটি।
গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে যায় তার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অভিষেকে একটি ছক্কা ও চার মেরে আউট হয়ে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ১৮ বলে ৪১।
এখন তিনি বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাতাচ্ছেন আইপিএল। বিশ্বের শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসরে ছয় ইনিংসে তিন ফিফটিতে ২৫৯ রান করেছেন অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেটে, ২৩৩.৩৩!
কিন্তু বিশ্বকাপ দলে তার জন্য জায়গা বের করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকরা। টপ অর্ডারে অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নার ও বিধ্বংসী ট্রাভিস হেডের সঙ্গে থাকবেন অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের তুলনায় স্মিথের না থাকাটা ততটা বিস্ময়কর নয়। টি-টোয়েন্টি দলে বেশ কিছু দিন ধরেই তার জায়গা নড়বড়ে। ২০২২-২৩ বিগ ব্যাশে ওপেনিংয়ে নেমে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর অবশ্য আশা জাগিয়েছিলেন ওপেনার হিসেবে নতুন শুরুর। দলে ফিরে গত নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওপেন করে ফিফটিও করেছিলেন। কিন্তু ওই সিরিজের পরের ম্যাচে এবং ফেব্রুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করতে পারেননি। সেটির খেসারতই দিতে হলো। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অবশ্য বেশির ভাগ ম্যাচে একাদশের বাইরেই থাকতে হয়েছিল তাকে।
ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও স্মিথের সম্ভাব্য জায়গাতেই মূলত গ্রিন ও ইংলিসকে বেছে নিয়েছেন নির্বাচকরা। টপ অর্ডার থেকে নিচে, নানা জায়গায় ব্যাট করতে পারেন গ্রিন। অলরাউন্ডার হিসেবে ভালো বিকল্পও তিনি।
মূল কিপার ম্যাথু ওয়েডের বিকল্প হিসেবে থাকছেন ইংলিস। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি দলে জায়গা পাওয়ার মতো।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড ও ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে গড়া দলের মিডল অর্ডার বলা যায় বেশ থিতু।
মূল তিন পেসার প্যাট কামিন্স, জশ হেইজেলউড ও মিচেল স্টার্কের সঙ্গে আরেক পেসার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন ন্যাথান এলিস। মূল স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার সঙ্গে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে থাকছেন অ্যাশটন অ্যাগার।
গত দুটি বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পর অস্ট্রেলিয়া দলেও সীমিত সুযোগে পারফর্ম করা আগ্রাসী অলরাউন্ডার ম্যাথু শর্ট নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন জায়গা না পেয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে গভীরতা এত বেশি যে, দল নির্বাচনের চ্যালেঞ্জটা উঠে এলো প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির কথায়। প্রয়োজন মনে করলে সামনে দলে পরিবর্তনের বার্তাও দিয়ে রাখলেন সাবেক এই বিশ্বকাপ অধিনায়ক।
“স্টিভ স্মিথ, ম্যাট শর্ট, জেসন বেহরেনডর্ফ, অ্যারন হার্ডি, স্পেন্সার জনসন এবং জেভিয়ার বার্টলেট, সবাইকে নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আরও বেশ কজনকে নিয়েই হয়েছে আলোচনা, যেমন জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, যে এখনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেনি কিন্তু মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং দ্রুত উন্নতি করছে।”
“বিভিন্ন সম্ভাব্য চিত্র ও যেসব বিকল্প নিয়ে আমরা ভাবি, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড গড়া সবসময়ই চ্যালেঞ্জের। প্রাথমিক এই দলে যারা সুযোগ পেলেন না, তাদেরকে আমরা পর্যবেক্ষণ করে যাব এবং আমরা যদি দলে পরিবর্তন আনতে চাই, আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তা করার সুযোগ আছে সামনের কয়েক সপ্তাহে।”
বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার শেষ সময় বুধবার। তবে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত দলে পরিবর্তন আনা যাবে কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই।
৫ জুন ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ। ‘বি’ গ্রুপে তারা আরও খেলবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ দল: মিচেল মার্শ (অধিনায়ক), অ্যাশটন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, টিম ডেভিড, ন্যাথান এলিস, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হেইজেলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জ্যাম্পা।