গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ইক্ষু খামারের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা সেখানে তাদের চাষ করা ধান কেটে আনতে চান।
Published : 16 Nov 2016, 09:03 PM
ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ সাঁওতালদের
চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের হাতকড়া খোলার নির্দেশ
সাঁওতালদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন
উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেখানকার প্রায় আটশ একর জমিতে তাদের ফলানো মাস কালাই, সরিষা ও পাট লুট হয়েছে।
এখন কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ওই জমিতে ঢুকতে পারছেন না সাঁওতালরা। পাক ধরা ধান ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কাটতে না পারলে তা নষ্ট হওয়ার ভয়ে আছেন তারা।
গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর গ্রামের ইলিমা টুডু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাঁওতালরা একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন। সেই জমি থেকে যখন উচ্ছেদ করা হয় তখন ধান ছাড়া সব ফসল লুট হয়ে গেছে।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহত ও অনেকে আহত হন। কয়েকশ ঘরে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ হয়। সাঁওতালদের দেড় শতাধিক পরিবার এখন ওই এলাকার একটি চার্চের খোলা প্রাঙ্গণ ও পরিত্যক্ত স্কুল ভবনে দিন কাটাচ্ছে।
উচ্ছেদের পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের বাড়ির জমিতে ট্রাক্টর চালালেও ফসলি জমি অক্ষত আছে।
এরপর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। চাষাবাদ করেন সেখানকার জমিতে।
ওই জমি থেকে তাদের উচ্ছেদের পরদিন থেকে ইক্ষু খামার এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে, তা ভিতর রয়েছে সাঁওতালদের চাষের ধান।
সহায়-সম্বলহীন সাঁওতালদের ধান তুলে আনার সুযোগের দাবি জানান সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি থেকে উচ্ছেদের পর সেখানে পুলিশ প্রহরা ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তারপরও সেখান থেকে মাস কালাই ডাল ও সরিষা লুট হয়ে গেছে।
মাদারপুরের মিস্ত্রী মুরমু বলেন, চার একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন তিনি। তার দুটি ঘর ছিল খামার এলাকায়। সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
“এহন জমির ধানও কাটতে পারছি না। তারা (খামার কর্তৃপক্ষ) জমির চারপাশে তার কাঁটা লাগাইছে। ঘরবাড়ি তো গেছে, জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাবে।”
সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সদস্য ভুপেন মারডি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফার্মের জমি চাষের জন্য আনা ১৬টি শ্যালো মেশিন এবং নয়টি ‘পাওয়ার টিলার’ লুট হয়েছে ওই দিন।
“এসবের অনেকগুলো ভাড়া করা ছিল। এখন মালিকদের এসব কোথা থেকে এনে দিবে গরীব সাঁওতালরা, সে চিন্তায় তাদের ঘুম নেই।”
উচ্ছেদের কারণে সাঁওতালদের কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আপাতত জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ধানগুলো ঘরে তোলার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রংপুর চিনিকলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেছেন, এসব জমির ধান কে কাটবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
প্রশাসন, সাঁওতাল নেতা ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বুধবার সাঁওতাল পল্লীর ৩৬ জন শিশু- কিশোর সাহেবগঞ্জ ইক্ষু ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। সংঘর্ষের পর থেকে আতঙ্কে স্কুলে যাওয়া বন্ধ ছিল তাদের।
ওই স্কুলে সাঁওতাল পরিবারের ৬০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাকী সরকার বলেন, “আমি নিজে গিয়ে ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে স্কুলে নিয়ে এসেছি এবং পরে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার বাকি ২৪ জনেরও স্কুলে আসার ব্যাপারে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে।”