পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমর থেকে দড়ি ও হাতকড়া খুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 14 Nov 2016, 12:46 PM
এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে হাই কোর্টে জমা দিতে বলা হয়েছে ঢাকার পুলিশ কমিশনার, রংপুরের ডিআইজি ও গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে।
এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে সোমবার এই আদেশ দেয়।
পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার সময় হাতকড়া পরিয়ে রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহা পরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, রংপুরের ডিআইজি, গাইবান্ধার পুলিশ সুপারসহ পাঁচজনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে আহত তিন সাঁওতালকে কোমরে দড়ি বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
ওই ঘটনায় আহত তিন তিন সাঁওতালকে হাসপাতালে হাতকড়া পরিয়ে রাখার খবর রোববার সংবাদ মাধ্যমে আসে। এ বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলিতে আহত চরণ সরেন ও বিমল কিসকোকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দ্বিজেন টুডুকে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশি পাহারা থাকার পরও কোমরে দড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে তিনজনকেই।
আদালতের আদেশের পর জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, যে আসামি মুমূর্ষু অবস্থায় থাকে কিংবা নিজে চলাচল করতে অপারগ হয়, তাকে হাতকড়া পড়িয়ে রাখার কোনো কারণ নেই।
“শারীরিকভাবে সক্ষম আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যার দুটো পায়ে গুলি লেগেছে তার তো আর পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচলই করতে পারে না, তাকে হাতকড়া পরিয়ে এই অমানবিক আচরণ করার কোনো কারণ আমি দেখি না।”
এই আইনজীবী বলেন, রংপুর পুলিশকে তিনি হাতকড়া পড়িয়ে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন।
“তাদেরও কোনো ধারণা নেই, কেন আসলে তাদের হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত হাতকড়া খুলে দিতে বলেছেন।”
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি এখন আবার ইজারা দিয়ে সেখানে ধান ও তামাক চাষ চলছে অভিযোগ করে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।
এরপর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দেয়।
সাঁওতালদের অভিযোগ, পুলিশের সহায়তায় সেদিন বাবা-দাদার ভিটা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। ঘরের মালামাল বের করতে না দিয়ে লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে ঘরে। প্রতিবাদ করায় পুলিশ গুলি চালায়।
গত সপ্তাহে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ওই অধিগ্রহণ চুক্তির ৫ নম্বর শর্তে উল্লেখ আছে, যে কারণে ওইসব জমি অধিগ্রহণ করা হলেও কখনও যদি ওই কাজে জমি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে অধিগ্রহণকৃত জমি সরকারের কাছে ফেরত যাবে। পরবর্তীতে সরকার এসব জমি আগের মালিকের কাছে ফেরত দেবে।
“আমরা এর আগে এসে দেখে গেছি, এসব জমিতে মিলের জন্য ইক্ষু চাষ না করে ধান ও তামাক চাষ চলছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকও এ ধরনের একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে। মিল তার চুক্তি ভঙ্গ করেছে।”