যশোরের মণিরামপুরে নবনির্বাচিত এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাছের ঘের তৈরিতে স্থানীয়দের অন্তত দুইশ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
Published : 19 May 2016, 01:19 PM
এ ঘটনায় মণিরামপুর উপজেলার ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টুরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নবনির্বাচিত এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানালে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ২২ মার্চের ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামছুল হক মন্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত শুক্রবার (১৩ মে) ২৫/৩০ জনের একদল লোক বোমা, পিস্তল, রামদাসহ মাটিকাটার দুইটি স্কেভেটর মেশিন নিয়ে উপজেলার মোবারকপুর মৌজায় জোর করে দুইশ বিঘা ফসলি জমিতে মাছের ঘের কাটা শুরু করে।
স্থানীয় গোকুল চন্দ্র হাজরা সাংবাদিকদের বলেন, “ওই বাহিনী হুংকার দিয়ে বলে- কেউ এ ব্যাপারে টু-শব্দ করলে নিস্তার নেই, তোমাদের এদেশে থাকার দরকার নেই, ভারতে চলে যাও।”
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা পবন কুমার বিশ্বাস তপন বলেন, “শুধু সংখ্যালঘুর জমি নয়,আরও যাদের জমিতে জোর করে ঘের করা হচ্ছে তাদেরও এই সন্ত্রাসী দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
রামনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ও চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, তার ৪৮ শতক জমি জোর করে দখলে নিয়ে ঘের করছে।
চণ্ডিপুর গ্রামের শামীম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তিনি চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন। তার সঙ্গে কোনো কথা না বলেই প্রায় ৩ বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে জোর করে ঘের করা হচ্ছে।
একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাই শুধু আমার ৭৬ শতক না, পাশের মনোহরপুর, রামনাথপুর গ্রামের বহু মানুষের জমিতে জোর কইরে ওরা ঘের করতেছে। ভয়ে মামলা করতিও পারতিছিনে,আপনারা আমাগের একটু বাঁচান।”
জমি না দিলেও জোর করে ঘের করছে বলে অভিযোগ করেন মনোহরপুর গ্রামের সামাদ।
মণিরামপুর থানার ওসি তাহেরুল ইসলাম বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বুধবার রাতে রামনাথপুর গ্রামের অরুণ হাজরা বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মন্টুসহ ১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
“ওই মামলায় ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মাহাবুর রহমানকে আটক করা হয়েছে।”
চেয়ারম্যান মন্টু আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও পারিবারিকভাবে তারা আওয়ামী লীগ করেন বলে জানান এই সাংসদ।
জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি এখনই বিষয়টি দেখছি।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, “অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আসামিদের আটক করে দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করা হবে।”
লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মন্টু জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের কাছ থেকে লিখিত না নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মৌখিকভাবে কৃষকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এখন ঘের তৈরির কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে জমির মালিকদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়া হবে।