পদ্মা, তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ কয়েকটি নদীর পানি বেড়ে ফরিদপুর, গাইবান্ধা, রংপুর ও নওগাঁর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখ খানেক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে।
Published : 23 Aug 2015, 10:11 PM
রোববার চার জেলার নদীগুলোর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গাইবান্ধা:
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ কয়েক নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার চারটি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া করতোয়া এবং ঘাঘট নদীর পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে।
করতোয়ার পানি ৫৯ সেন্টিমিটার ,ঘাঘট নদীর পানি ৪৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, গত তিন দিনে যমুনার ভাঙনে সাঘাটা ও তিস্তার ভাঙনে সুন্দরগঞ্জে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ এলাকায় ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটিও হুমকির মুখে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূরুন্নবী সরকার জানান, সুন্দরগঞ্জের রামডাকুয়া, হাজারীর হাট, লালচামার বাজার, পাড়াসাদুয়া, কানিচরিতাবাড়ি, চরচরিতাবাড়ি, ছয়ঘড়িয়া, বোচাগাড়ি এলাকার শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে চারটি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এবং বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও পানি সবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
ফরিদপুর:
ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার সদর উপজেলার চরভদ্রাসন, সদরপুর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁসহ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম তালুকদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সদর উপজেলার চরভদ্রাসন, সদরপুর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে বলেও জানান তিনি।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান বলেন, “গত দুই দিনে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কৃষিজীবী মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে।”
রংপুর:
তিনদিনের টানা বর্ষণে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।বাড়িঘরে পানি ওঠায় মানুষ স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, টানা বর্ষণে নগরীর গুপ্তপাড়া, নুরপুর, বৈরাগীপাড়া, মাহিগঞ্জ ধুমখাটিয়া, আমাশু কুকরুল, খটখটিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার মানুষজনকে স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নওগাঁ:
নওগাঁর আত্রাইয়ে দুটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শশ বিঘা জমির ফসল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন উঁচু জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু পরিবার।
আত্রাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার সকাল ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ এবং ভরতেঁতুলিয়াতে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।এ কারণে উপজেলার শতশত বিঘা জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে আত্রাই নদীর পানি এখন বিপদসীমার প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।