মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় সব সংশয় কাটিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত প্রিয়জনেরা।
Published : 21 Aug 2015, 07:00 PM
আনন্দঘন এই মুহূর্তের সঙ্গী হয়েছেন প্রতিবেশীরাও। অস্ত্রোপচার করে তাকে পৃথিবীতে আনা চিকিৎসক থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাকে দেখতে ছুটে আসেন।
মা নাজমা বেগম ও বাবা বাচ্চু ভূঁইয়ার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে নিজ বাড়িতে পৌঁছায় সুরাইয়া।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে নাজমা বেগম প্রথমে মেয়েকে তুলে দেন দাদি দুলালী বেগমের কোলে। দাদি কপালে চুমু দিয়ে নাতনিকে আদর করেন। এরপর সুরাইয়ার বোন সুমাইয়া (১০) ও একমাত্র ভাই সাগর (১৫) বোনকে কোলে নিয়ে আদর করে।
পরিবারের অন্য সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা সুরাইয়াকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন। কোলে নিয়ে আদর করেন কেউ কেউ।
তারা বাড়ি পৌঁছার আগে থেকেই সুরাইয়াদের বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ, সুরাইয়ার মা নাজমা বেগমকে প্রথম অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. শফিউর রহমান, সংবাদকর্মীসহ স্বজন-শুভানুধ্যায়ীরা।
গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে মমিন ভূইয়া নামে একজন মারা যান। গর্ভস্থ শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হন গৃহবধূ নাজমা বেগম।
ওইদিন রাতে মাগুরা সদর হাসপাতালে অপারেশনের পর ৮ মাসের গুলিবিদ্ধ শিশুকে ভূমিষ্ট করানো হয়। ২৫ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় মেয়েটির নাম রাখা হয় সুরাইয়া।
প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর শুক্রবার সকালে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন নাজমা।
সুস্থ মা-মেয়েকে দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডা. শফিউর রহমান বলেন, “মা নাজমা বেগমের কোলে চড়ে সুরাইয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এজন্য আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। এই বিশেষ আনন্দের মুহূর্তের ভাগীদার হতে ছুটে এসেছি সুরাইয়াদের বাড়ি।”
কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এ চিকিসক।
“কখনও এরকম ঘটনার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত ছিলাম না। মা ও পেটের শিশু নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে থাকায় কর্তব্য মনে করে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ওই ঝুঁকি না নিলে জীবন দুটি বাঁচানোর যে সম্ভাবনা ছিল তা শেষ হয়ে যেত,” বলেন ডা. শফিউর।
অস্ত্রোপচারের আগে সদর হাসপাতালের শিশু ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সহায়তা নেন বলে জানান তিনি।
মায়ের কোলে সুরাইয়ার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবুর রহমান।
এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাজমা বেগমের হাতে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সুরাইয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আগামীতে তাদের পরিবারকে সব ধরনের সহয়োগিতার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক।
পুলিশ সুপার এ কে এম এহসান ঊল্লাহ বলেন, “সেদিনের মৃত্যু পথযাত্রী সুরাইয়া আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে এ জন্য আমি আনন্দিত। ঘটনার পর থেকে জেলা পুলিশ পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ায়। পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হয়ে সুরাইয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত সব ধরনের সহয়োগিতা অব্যাহত রয়েছে।”
আগামীতেও জেলা পুলিশ সুরাইয়া ও তার পরিবারের পাশে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করে যাবে বলে প্রতিশ্রুত দেন তিনি।
সুরাইয়ার বাবা-মা নানাভাবে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও পাশে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন, চিকিৎসক, সংবাদকর্মীসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।