আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফয়সালা রাজপথেই: ফখরুল

“তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসন পাবে কি-না তার নিশ্চয়তা নেই।”

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2023, 02:30 PM
Updated : 11 June 2023, 02:30 PM

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফয়সালা রাজপথেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেছেন, “আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। আমরা যাদের সঙ্গে লড়াই করছি সংগ্রাম করছি, তারা কিন্তু সাধারণ মানুষ নন। তারা দানব। আওয়ামী লীগ জনগণের দল নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা নির্বাচন চায় না। তাদের শরীরের ভাষাই বলে দেয় তারা সন্ত্রাসী ছাড়া আর কিছুই না। তাদের সঙ্গে ফয়সালা হবে রাজপথেই।

“এখান থেকেই আমরা জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথে একটা আন্দোলনের সৃষ্টি করব। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা তাদেরকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, সংসদকে বিলুপ্ত করতে এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে”, যোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।

রোববার দুপুরে গাজীপুর মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এই আয়োজনে সম্মেলনে যোগ দেন তারেক রহমান।

১৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা তারেক রহমানকে ‘বীরের বেশে’ দেশে ফেরাতে চান মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশ থেকেই দলকে সুগংগঠিত করছেন এবং তার ‘নির্দেশিত পথে’ দল চলছে।

ফখরুল বলেন, “আজকে একটা নতুন স্লোগান এসেছে। সেই স্লোগান কে দিয়েছেন? আমাদের নেতা তারেক রহমান। সেই স্লোগানটা কী? স্লোগানটি হল ‘ফায়সালা হবে কোন পথে?  ‘রাজপথে’ এবং ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।

“আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ‘বীরের বেশে’ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পরের বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে ‘চিকিৎসার জন্য’ লন্ডনে যান। তিনি ‘সময় এলেই’ ফিরবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হলো গত দেড় দশকেও ফেরেননি।

এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা ও ২ কোটি টাকা জরিমানা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা এবং বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বিএনপি নেতার।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। সেই সাজার দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়া বাসায় ফিরলেও তিনি রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। বিএনপি চালাচ্ছেন তারেক রহমানই।

‘১০ আসনও পাবে না আওয়ামী লীগ’

উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘মৃত ইস্যু’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি নেতা বলেন, ”তোমরা (আওয়ামী লীগ) জোর করে ক্ষমতায় বসে আছ। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তোমাদের জিতবার কোনোই সম্ভাবনা নেই, ১০টি আসন পাবে কি-না তার নিশ্চয়তা নেই।

“নির্বাচন আমরা করব। তবে তা হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ ব্যাপারে কোনো আপোষ নেই।“

গত দুটি সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, “২০১৪-তে নির্বাচন করেছে ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে আগের রাতেই ভোট মেরে-টেরে। এবার তা চলবে না। এবার আর সেই কাজ করতে দেওয়া হবে না।

“এবার জনগণ আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জেগে উঠেছে। সংগঠিত হচ্ছে। তারেক রহমান ১০ দফা দাবি দিয়েছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। রাষ্ট্রের যে ক্ষতিগুলো আওয়ামী লীগ করেছে তা পূরণ করার জন্য নতুন করে কিছু কাজ করতে হবে।

“সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রশাসনে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করার জন্য একটা কাঠামো নির্মাণ করতে হবে।”

‘এখন ভাইদের রাজনীতি নয়’

গাজীপুরের টেকনগপাড়া এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সম্মেলন হয়। সেখানে কর্মীদের একাংশ এক নেতার পক্ষে, আরেক অংশ আরেক নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।

এমন স্লোগানে বিরক্ত হয়ে ফখরুল বলেন, “যারা জেলে যায়, আত্মত্যাগ করে তাদের মুখে আজকে স্লোগান হওয়া উচিৎ ছিল ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ, ‘মুক্তি চাই মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’।

“আমি খুশি হতাম যদি তোমরা বলতে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। কিন্তু তোমরা তা দাও নাই। তোমরা এখন ভাইদের নিয়ে স্লোগান দিচ্ছ। এখন ভাইদের রাজনীতি নয়, এখন জনগণের রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি, এখন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি।”

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্লোগান হচ্ছে রাজনৈতিক দলের খুব বড় একটি ওষুধ, মেডিসিন। এ মেডিসিন দিয়ে সারাদেশের মানুষকে জাগ্রত করা যায়। আপনারা নেতৃবৃন্দরা জানেন কয়েকটা বিশেষ স্লোগানের মধ্য দিয়ে এ জাতি স্বাধীন হয়েছে। এই জাতিতে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে এবং আমরা বার বার এ স্লোগানের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

এতে প্রধান বক্তা ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন। বিশেষ বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শওকত হোসেন সরকার।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মো. ওমর ফারুক স্বাধীন, ডা. মাজহারুল আলম ও মো. মুজিবুর রহমান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি শিরীন চাকলাদার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান এলিচ, মো. সুরুজ আহমেদ ও আব্দুস সালাম, গাজীপুর মহানগর কৃষকদলের সভাপতি মো. আতাউর রহমান, বাসন থানা বিএনপির সভাপতি মো. তানভীর সিরাজ।

সম্মেলন শেষে শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং এম মনজুরুল করিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদেরকে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।