শনিবার ভোর রাতে বরিশাল-৫ আসনের একটি নির্বাচনি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে একদল যুবক; এতে ক্যাম্পের টেবিল ও ঘেরা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে।
Published : 06 Jan 2024, 10:34 PM
বরিশাল-৫ আসনে নৌকার নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগের জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দিকে।
এই আসনে (মহানগর ও সদর) নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম শনিবার বিকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
তবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার চেষ্টা করলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায় সাদিক আব্দুল্লাহর।
শনিবার ভোর রাতে বরিশাল নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে একদল যুবক। নৈশ প্রহরী আগুন নিভিয়ে ফেলার আগে নির্বাচনি ক্যাম্পের টেবিল ও ঘেরা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, “তাদের প্ল্যান হলো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করা। আমার ক্যাম্পে যে আগুন লাগল – আমার লোকজন তো করেনি। এ আগুন তারা [সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর লোকজন] লাগাচ্ছে; বিএপিকে দোষারোপ করছে। এ আগুন তো বিএনপি দেয়নি।
“এ কাজ করেছে; কিন্তু ট্রাকের উপর ভর করেছে, ট্রাকের উপদেষ্টা মণ্ডলী যারা আছে তারা করেছে। তারা এটা বিএনপির নামে করছে। তারা বরিশালের মানুষের শান্তি-শৃংখলা বিঘ্নিত করার জন্য করছে।”
শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রামে রাতে নৌকার একদল কর্মী নগরীর চরবাড়িয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় হামলার শিকার হন।
এ সময় এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপনের ট্রাক প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুরও করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে ২০-২৫ জন তরুণ নৌকার স্লোগান দিয়ে ট্রাকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে। এ সময় হামলাকারীরা ওই কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর লোকজন নৌকার লোকজনের ওপর দোষ চাপানোর জন্য এ হামলা চালিয়েছে বলে জাহিদ ফারুক শামীমের অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নির্বাচন সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল যেভাবে শান্তিপূর্ণ এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এটা এ মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত সুষ্ঠু ছিল।
“একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিপূর্ণভাবে বাদ হয়ে গিয়েছে; তখনই কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাকের উপর ভর করেছে। তারপরে তারা মারমুখী হয়েছে।”
জাহিদ ফারুকের অভিযোগ, স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী প্রথম থেকে শালীনতা বজায় রেখে কিন্তু নির্বাচনী প্রচাণা করছিলেন। তাকে প্ররোচনা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে, তাকে সামনে রেখে মারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তারা।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, নৌকার কর্মীরা সাধারণভাবে চরবাড়িয়া ক্রস করছিল। শেষের দিকে দল থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে গেছিল। তাদেরকে আটকে তাদের মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। পরে পুলিশ ও র্যাব তাদের উদ্ধার করেছে।
নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী আরও বলেন, নৌকার কর্মী যদি হামলা করতে যেত তাহলে প্রথম দিকে যারা ছিল, তাদের তো আহত করার কথা। তারা তো আহত হয়নি। এর মানে হলো পিছন থেকে তাদের ওপর হামলা হয়েছে।
“যারা বরিশাল নগরীতে সন্ত্রাস করেছে, চাঁদাবাজি করেছে, তারা এবং তার সঙ্গের সাঙ্গ-পাঙ্গরা এই কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুল করিম, সাবেক দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বলরাম পোদ্দার তার পাশে ছিলেন।
বরিশাল নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির আহবায়ক টুটুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে নৈশ প্রহরী আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আগুন নির্বাচনী ক্লাবের টেবিল ও ঘেরা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে পেট্রোলের একটি বোতল পাওয়া গেছে।
ঘন কুয়াশার কারণে প্রহরী অগ্নিসংযোগকারীকে দেখেননি জানিয়ে টুটুল বলেন, ধারনা করা হচ্ছে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন বাতিল হওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীরা এ ঘটনায় জড়িত।
অভিযোগ সম্পর্কে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্টজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা কোনো পক্ষের জন্য ভোট চাইনি। আমরা কেন্দ্রের নিদের্শনা অনুযায়ী সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছি। সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সকলের প্রতি সেই আহবান জানিয়েছি।”
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রার্থী হয়েছিলেন। তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর বরিশালে এসে দুইদিন অপেক্ষ করেছেন।
“আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে যদি বলতেন, তাহলে আমরা নৌকার প্রচার-প্রচারনায় যেতাম; কিন্তু তিনি [শামীম] বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ উপেক্ষা করে নির্বাচন করছেন।”
তিনি বলেন, “আমার ধারণা উনি নৌকার প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ নন; কারণ আওয়ামী লীগ হলে তো সবাইকে ডাকতেন।”
শামীমের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, “তিনিও তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উসকে দিচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন কেউ যদি একটা মারে তাহলে ১০ টা দিতে। আমরা কোথায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছি?”