হামলা ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
Published : 23 Jul 2024, 11:59 PM
নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের ধরে আইনের আওতায় আনতে যা যা করার দরকার সরকার তার সবই করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
হামলা ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিকালে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শুক্রবার কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় নরসিংদী জেলা কারাগারে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৮২৬ আসামি পালিয়ে যায়, লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র ও প্রায় আট হাজার গুলি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল, “বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশকে বিপর্যস্ত করতে এ আক্রমণ হয়েছে। সেতু ভবন, মেট্রোরেল, বিটিভি, নরসিংদী কারাগার, ইন্টারনেটসহ সব পুড়িয়ে দেওয়ায় আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
“নরসিংদী কারাগারে যেখানে আমরা সেইফ জোন মনে করি, সেখানে তারা ভাঙচুর তো করেছেই, অগ্নিসংযোগও করেছে। আমাদের অস্ত্রগার লুট করেছে। যেসব জঙ্গিরা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমাদের পুলিশ বাহিনী যাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আটক করেছিল, নয়জন ছিল এখানে তাদেরকে তারা মুক্ত করে নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “উদ্দেশ্যটা কী সেটা আপনারা বুঝতে পারেন। দেশকে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ সমস্ত আক্রমণ হয়েছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। যা যা করা দরকার আমরা সব করব।
যেসব জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে তারা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “তারা দুজন নারী জঙ্গিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। কেন এটা হল, কারও গাফিলতি ছিল কিনা, কেউ যোগান দিয়েছিল কিনা- সেসব ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারাগারের কারও দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”
কারাগারে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চিরুনি অভিযান চলছে। সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে সব অপরাধীদের প্রতিহত করছি। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত সব একত্র হয়ে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি করছে।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাধ্য হয়েই কারফিউ জারি করা হয়েছে। এতে জনগণের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। দুস্কৃতকারীদের ধরে পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে দিলে নয় ‘জঙ্গি’সহ মোট ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।
প্রাথমিকভাবে কারা কর্তৃপক্ষ ও রক্ষীরা প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে তারা জীবন বাঁচাতে কয়েদিদের সঙ্গে মিশে যান। এ সময় যেসব কয়েদি জেল ছেড়ে পালাতে চাননি তাদের মারধরও করা হয়।
শনি ও রোববার কারাগারে গিয়ে হামলার ধ্বংসের চিত্র দেখা যায়। শনিবারও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। কারাগারের পুরো চত্বরজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ইট-পাটকেল, কারাগারের বিভিন্ন স্থাপনার ভাঙা জিনিসপত্র। কর্তৃপক্ষ বলছিলেন, আগামী এক বছরেও কারাগারটিতে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করা তোলা যাবে না।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজারের বেশি গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার রাইফেলের এবং শটগানের গুলি রয়েছে এক হাজার ৫০টি।
তবে মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত মোট ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন কয়েদি। তাদেরকে কারাগারের আশপাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৩৩টি, এক হাজার গুলি এবং অসংখ্য হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
আরও পড়ুন: