গরু লুটে জড়িতদের শনাক্ত করা এবং গরু উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
Published : 09 Jun 2024, 02:01 PM
ফেনীতে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খামারে খামারে গরু ডাকাতি ও লুটের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দাগনভূঞা উপজেলার একটি খামারে শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩টি গরু লুটের পর জেলার ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজার খামারির মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এসব খামারে বাড়ানো হয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা। ঈদের আগে চোর-ডাকাতদের হাত থেকে পালিত গরু রক্ষায় দিনরাত পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন খামার মালিক ও কর্মচারীরা। গরু চুরি ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব-পুলিশ।
শুক্রবার মধ্যরাতে দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পূর্ব জয় নারায়ণপুরের ‘খান অ্যাগ্রো ফার্মে’ শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩টি গরু লুট করা হয়।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লায় লুট হওয়া গরু বোঝাই পিকআপ ফেনীতে জব্দ ও আন্তঃজেলা ছিনতাই চক্রের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
‘খান অ্যাগ্রো ফার্মের’ মালিক মো. দাউদ খান বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি গরু লালন-পালন করে আসছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে ১৫-২০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি পেছনের টিনের বেড়া কেটে খামারে ঢোকে। এরপর খামারে থাকা ব্যক্তিদের মারধর করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে।
তিনি বলেন, পরে খামারে থাকা ২১টি গরু মধ্যে ১৩টি গরু একটি ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। লুট হওয়া সব গরু উন্নত শাহিওয়াল জাতের। প্রতিটি গরুর ওজন ছয় মণের বেশি।
প্রতিটির বাজারমূল্য দুই লাখ টাকা করে ধরলে ১৩টি গরুর বাজার মূল্য ২৬ লাখ টাকা বলে জানান ওই খামার মালিক।
দাগনভূঞা থানার ওসি মো. আবুল হাসিম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আসন্ন কোরবানি মৌসুমে ফেনীতে পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৬ হাজার। বর্তমানে জেলায় মজুদ রয়েছে ৯০ হাজার ২৫০টি পশু।
বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে খামার ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত রয়েছেন ৫ হাজার ২৪৬ জন খামারি। এসব খামারির মধ্যে তিন হাজারের বেশি তরুণ খামারি রয়েছে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার গরু খামারি সাংবাদিক এন এন জীবন বলেন, দুই মাস আগে সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামে তার খামার থেকে অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুধের একটি বিশাল দেহী গাভী রাতের আঁধারে চুরি হয়। এত দিন অতিবাহিত হলেও গরু উদ্ধার বা জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ফেনী শহরের তরুণ খামারি অরাফাত খাঁন বলেন, কোভিডকালীন ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে গবাদিপশু পালনে ঝুঁকেছেন। প্রথম বছর ব্যবসা বুঝতে সময় লাগলেও গেল বছর বেশ ভালো ব্যবসা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে শতাধিক গবাদিপশু লালন-পালন হচ্ছে তার খামারে। তবে গরু লুটের ঘটনায় তিনিও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। খামারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
সদর উপজেলার লস্করহাটে ‘আমান অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স’ এর উদ্যোক্তা পরিচালক রিয়াজ রুবু বলেন, প্রতি বছর কোরবানিকে কেন্দ্র করে কয়েকজন বন্ধু মিলে খামারে গরু লালন-পালন করে আসছেন। বিগত সময়ের মতো এবারও বিপুল সংখ্যক গরু খামারে মজুদ রয়েছে। অন্য একটি খামারে গরু লুটের খবরে তাদের খামারেও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, “কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আন্তঃজেলা ছিনতাই চক্রের প্রধান শামীম ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন চক্রটি ছিনতাইয়ের জন্য পশুবোঝাই যানবাহন টার্গেট করে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে চক্রটি বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ পরিচয়ে কুমিল্লা থেকে পাঁচটি গরুবোঝাই একটি পিকআপ ছিনতাই করে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।
“খবর পেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় র্যাবের একটি দল অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে শুক্রবার ভোর রাতে গরু বোঝাই চোরাই পিকআপ এবং মো. শামীম ভূঁইয়াকে আটক করে।”
তিনি বলেন, “এ সময় পিকআপসহ পাঁচটি ষাঁড় গরু জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার শামীম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কুমিল্লা দক্ষিণ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।”
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, “১৩টি গরু লুটের বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। গরু লুটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং লুট হওয়া গরু উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।”
তিনি বলেন, এক বছরে ফেনী জেলায় গরু চুরির ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। এই সময়ে চুরি হওয়া গবাদিপশুর সংখ্যা ৪৯টি। কোরবানি ঈদকে ঘিরে জেলায় গরু চুরি রোধে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।