শেরপুরের বিভিন্ন দোকানে এই মিষ্টি প্রতি কেজি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Published : 24 Mar 2025, 10:42 AM
শেরপুর জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টির মধ্যে অন্যতম ‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি’। মাসকলাই ডালের তৈরি এ মিষ্টি ইফতারের প্লেটে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
খুরমা-খেজুর থেকে শুরু করে লাচ্ছি, বোরহানি, কলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, লাড্ডু, বুন্দিয়াসহ আরও নানা রকম খাবার থাকলেও শেরপুরের মানুষদের ইফতারে ‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি চাই-ই চাই।
শহরের মুন্সিবাজার ঘোষপট্টির লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পঙ্কজ ঘোষ জানান, মাষকলাইয়ের আমিত্তি শেরপুরের ঐতিহ্য। এই মিষ্টি প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে তৈরি করা হচ্ছে। রোজার মাসে এবং পূজাতে বেশি চলে।
এ মিষ্টি মূলত শরৎকালে বানানো হলেও ব্যাপক চাহিদার কারণে রোজার মাসেও তা দোকানে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। মাষকলাইয়ের আমিত্তিতে মূল উপকরণ মাষকলাইয়ের ডাল। সঙ্গে মেশানো হয় আতপ চালের গুঁড়া।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোজার মাসে ইফতারে মাষকলাইয়ের আমিত্তির চাহিদা বেড়ে যায়। ক্রেতারা শহরের ঘোষপট্টির দোকানগুলোয় ভিড় ঠেলে কেনেন এ মিষ্টি।
জনপ্রিয় এ মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া কি-জানতে চাইলে লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “প্রথমে কাঁচা মাষকলাইয়ের ডাল ভালো করে ভিজিয়ে রেখে গুঁড়া করা হয় মেশিনে। এরপর তাতে পরিমাণ মতো মেশানো হয় চালের গুঁড়া। কাঁচা আমিত্তি বানিয়ে তেলে ভাজা হয়। পরে ভাজা আমিত্তিগুলো চিনির শিরায় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।”
কয়েকজন মিষ্টি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব ও ভাইফোঁটায় এই মিষ্টি তৈরি করা হতো। তবে রোজায় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০-২৫ বছর ধরে ঘোষপট্টির মিষ্টির দোকানগুলোয় মাষকলাইয়ের আমিত্তি বিক্রি করা হচ্ছে।
শেরপুর শহরের দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, প্যারিমোহন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, রাজবল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ বিভিন্ন দোকানে এই মিষ্টি প্রতি কেজি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রোজায় প্রতিদিন ‘বিপুল পরিমাণ’ আমিত্তি বিক্রি হয় বলে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানালেন।
প্যারিমোহন মিস্টান্ন ভাণ্ডারের শম্ভুনাথ বলেন, “ঐতিহ্যগতভাবে যুগের পর যুগ ধরে মাষকলাইয়ের আমিত্তি তৈরি করা হচ্ছে। রোজায় বাজারে জিনিষের দাম বাড়লেও আমরা আমিত্তির দাম বাড়াইনি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য বর্তমানে প্রতি কেজি আমিত্তি বিক্রি করছি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়।”
তিনি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্য এবং বাপ দাদার সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য আমরা আমিত্তি তৈরি করছি। আমরা চাই রোজাদার ব্যক্তিরা আমাদের কাছ থেকে ভালমানের আমিত্তিটা যেন নেন।”
মাষকলাইয়ের আমিত্তি কিনতে আসা মেহেদী হাসান শামীম ও সাজিদুর রহমান বলেন, এই মিষ্টি অত্যন্ত সুস্বাদু। ইফতারে এটি রোজাদারদের কাছে এক বাড়তি আকর্ষণ।
মোশারফ হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “পরিবারের সবার জন্য মাষকলাইয়ের আমিত্তি কিনতে এসেছি। দোকানে ভিড়; অপেক্ষা করছি। প্রতিদিনই ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই এই মিষ্টিটা চাই-ই।”