পাহাড়িরা বিশ্বাস করেন, সাতটি বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজিতে তৈরি পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়।
Published : 13 Apr 2025, 03:43 PM
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংগ্রাই, সাংলান, চাংক্রান ও পাতা। বর্ষবরণ ঘিরে এসব উৎসবের অতিথি আপ্যায়নে অন্যতম অনুষঙ্গ ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাজন’ বা ‘পাঁচন’।
কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যের এ রান্নার সম্প্রদায় ভেদে আলাদা নাম রয়েছে। তার মধ্যে ‘পাজন’ শব্দটি ব্যবহার করেন মূলত চাকমারা।
চাকমা সম্প্রদায়ের বিঝুর দ্বিতীয় দিনে রোববার ঘরে ঘরে অতিথিদের পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ফলমূল, আচার, বিন্নি চালের তৈরি পিঠাসহ নানা ধরনের খাবারে আয়োজন থাকে।
মূলত ৩০ থেকে ৪০ পদের সবজি দিয়ে রান্না করা হয় বিশেষ পদ পাজন। যার মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে বনে জন্মানো সবজি।
পাহাড়িরা বিশ্বাস করেন, সাতটি বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজিতে তৈরি পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। তাই এটি তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
জেলার ফ্রোজেন রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী নারী উদ্যোক্তা বিনীতা চাকমা বলেন, “৪০ পদের সবজি দিয়ে এই পাজন রান্না করা হলে এটা একটি ঔষধি গুণে রূপ নেয়। আগে গ্রাম ও জুমের মানুষেরা যেসব খাবার বা সবজি সব মৌসুমে পাওয়া যায় না সেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতেন।
“এক পর্যায়ে সেগুলো বিভিন্ন সবজির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে খেয়ে তারা শরীরে শক্তি অর্জন করতেন। শরীরের শক্তি অর্জনকে কেন্দ্র করে সে সবজিকে ঔষধ হিসেবে বানানো হত। সে প্রচলন থেকে বিঝুতে পাজনকে খাওয়া হয়।”
রাঙামাটির সংস্কৃতি গবেষক ও শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী বলেন, “পাজন রান্না ও খাওয়ার প্রচলন হয়েছে কয়েকশত বছর আগে। পাজন শব্দটি জুম থেকে এসেছে। আগের সময়ে পাহাড়িরা সবাই জুমিয়া ছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন, জুমে যেসব সবজি উৎপাদন হয় সে সবের ঔষধি গুণ রয়েছে।
“সেজন্য জুমের সব সবজি মিশিয়ে রান্না করা হত পাজন। বিশ্বাস করা হত পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগব্যাধিমুক্ত থাকা যায়।”
সেজন্য নতুন বছরে সুস্থ থাকার জন্য বছরের শেষ দিন পাজন খাওয়া হয় বলে মনে করেন এই সংস্কৃতি গবেষক।