“আগে স্কুলে আসতাম আর ক্লাস করে বাড়ি চলে যেতাম; মাঠ না থাকায় খেলতেও পারতাম না। এখন আমাদের খেলার মাঠ হয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত।” বলছিলো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নবুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় মণ্ডল।
একইভাবে শৈশবের দুরন্ত পা মাঠে গড়িয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৩টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে মোড়গ লড়াই, ফুটবল, গোল্লাছুট, কানামাছিসহ আরও অনেক খেলা হয়। মাঠ হওয়ায় আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে তাদের মনে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব মাঠ বালু দিয়ে ভরাট ও সম্প্রসারণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পরে ধাপে ধাপে মাঠগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ ছিলো না। আর যেসব বিদ্যালয়ে মাঠ ছিলো সেগুলোও খেলার অনুপযোগী ছিলো। খেলাধূলার মাঠ ও পরিবেশ না থাকায় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো উপজেলার অন্তত ৯ হাজার শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার ২০টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে টুঙ্গিপাড়া এসে জানতে পারেন যে, অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধূলার কোনো পরিবেশ নেই। তখন তিনি দ্রুত মাঠ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের খেলাধূলার উপযোগী করে তুলতে নির্দেশ দেন।
“তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের টাকায় ৩৩ টি বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেন।”
তিনি আরও জানান, হেদায়েতুল ইসলাম গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন এই কাজ সমাপ্ত করেছেন। খেলার মাঠ পেয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উচ্ছসিত।
গোপালপুর রাখিলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিদাস বিশ্বাস বলেন, তার স্কুলটি একটু নিচু এলাকায় হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উঠে যেতো। এছাড়া মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলাও করতে পারতো না। এ অবস্থায়ই পাঠদান করা হত।
“কিন্তু শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ ঘটতো না। মাঠ তৈরির পর এখন শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাও করতে পারছে। এখন আর বিদ্যালয়ে পানি উঠে পাঠদান ব্যাহত হবে না।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, “মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
“এতে দৈনন্দিন পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে চান। সেই লক্ষ্যই আমরা কাজ করছি।
“বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারলে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। এতে তরুণ প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। ”