মাদারীপুর-ঢাকা বাসভাড়া বৃদ্ধি, বর্জনের আহ্বান যাত্রীদের

ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ জানিয়ে ফেইসবুকে জেলার পরিবহনগুলো বর্জনের ডাক যাত্রীদের।

রিপনচন্দ্র মল্লিকমাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 06:02 PM
Updated : 8 March 2023, 06:02 PM

মাদারীপুর থেকে ঢাকা বাসভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করায় ক্ষুব্ধ কয়েকজন যাত্রী এই রুটের বাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ ভাড়া কার্যকর করেছে জেলা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যাত্রীদের কয়েকজন ফেইসবুকে জেলার পরিবহনগুলো বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত মাদারীপুর থেকে সড়কপথে ঢাকা আসতে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হতো ২৫০ টাকা। সেতুর চালুর পর ভাড়া বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়।

পরে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার সেই ভাড়া আরেক দফা বাড়িয়ে করা হয় ৩৫০ টাকা। তবে পরিবহনগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে তারা ৩০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া শুরু করে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো ধরনের নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন ছাড়াই এই ভাড়া পরের দিন থেকে কার্যকর করা হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের এই প্রতিবাদ চলমান রয়েছে। তারা বিকল্প যানবাহন ও পথে রাজধানীতে যাতায়াত করছেন। এতে সংকটে পড়েছে মাদারীপুর-ঢাকা রুটের বাসগুলো।

মাদারীপুর বিআরটিএ থেকে জানা যায়, মাদারীপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১১ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা।

রাকিব হাসান বকুল নামের এক যুবক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “সার্বিক, সোনালি, চন্দ্রা পরিবহন যেন আমাদের পকেট কেটে নিচ্ছে। মাদারীপুর পরিবহনসহ সকল পরিবহন বয়কট করলাম। মাদারীপুর থেকে ঢাকার ভাড়া ৪০০ টাকা। আর শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার ভাড়া ২৫০ টাকা; এতে বাঁচবে ১৫০ টাকা।”

সরদার এমডি শামীম নামের আরেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ঢাকা থেকে মাদারীপুরের দূরত্ব ১১৪ কিলোমিটার। ৩০০ টাকার ভাড়া এক রাতে বেড়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। তার মানে আমরা এখন পরিপূর্ণ জিম্মি।”

তাদের মতো আরও অনেকেই বর্ধিত ভাড়া নিয়ে ফেইসবুকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে মাদারীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকাগামী সোনালী, সার্বিক, চন্দ্রা ও মাদারীপুর পরিবহনগুলোতে যাত্রীর চাপ নেই। বেশিরভাগ বাস ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে অনেক যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির পর থেকে বিকল্প পথে মস্তফাপুর ও শরীয়তপুর রুট হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করছেন।

ঢাকাগামী যাত্রী মাসুদ হাওলাদার বলেন, “চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাচ্ছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি ৩০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা হয়েছে।

“তাই বিকল্প পথে বরিশালের গাড়িতে করে ঢাকা যাব। যতদিন এই অযৌক্তিক ভাড়া কমানো না হবে, ততদিন সব বাস বয়কট করলাম।”

কাওসার হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, “পেট্রোলের দাম বাড়েনি। হঠাৎ করেই ১০০ টাকা ভাড়া বাড়ানো এটা অযৌক্তিক। আমরা সবাই মাদারীপুর সড়ক পরিবহন সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি।”

ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান তুষু বলেন, “আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি। অনেকে এ সম্পর্কে না বুঝে জনগণকে ভুলপথে পরিচালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

“অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করলে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে; তারাই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন।”

আগের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি রেটের চেয়ে ভাড়া কমিয়ে ৩০০ টাকা রাখতাম। কিন্তু এখন সরকারি রেট অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।”

এ বিষয়ে বিআরটিএ এর মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নূরুল হোসেন বলেন, “হেডকোয়ার্টার থেকে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া হলো ৩৯৩ টাকা। বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।”

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, “জেলা পর্যায়ে বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটির একজন সদস্য আমি। ভাড়া বৃদ্ধির আগে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে আমার জানা নেই।

“তবে কয়েকদিন ধরে ১০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির কথা শুনছি। বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি।”

এ দিকে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে; তারাও বিষয়টি দেখছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।