বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, বিশ্বদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে শিক্ষার্থী মিমের জানাজার পরে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
Published : 31 Oct 2024, 10:33 PM
দূরপাল্লার ৩০টি বাস বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আটকে রেখে বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলার আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বাস চাপায় সহপাঠীর মৃত্যুতে বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরোধের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় শুভ।
তিনি বলেন, বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ অবিলম্বে ১০ দফা দাবিতে সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। কিন্তু বাস চালককে গ্রেপ্তারসহ মালিককে হাজির করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে দ্রুত দাবি পূরণের আশ্বাসে ও দূরপাল্লা রুটের ৩০টি বাস আটকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এনে রেখে মহাসড়ক ছেড়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি পূরণ হলে বাসগুলোও ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুজয় শুভ।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইশা ফাউজিয়া মিম ১ নম্বর গেট সংলগ্ন মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাস চাপায় ঘটনাস্থলে মারা যান।
ঢাকার আজিমপুর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেনের মেয়ে মিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১২তম ব্যাচের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস পরিবহনের বাসটি আটক করে পুড়িয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
তখন চালক-হেলপারকে গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে আট ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মহাসড়ক ছেড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তারা ফের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বাসচাপায় নিহত মিমের লাশের সুরতহাল বৃহস্পতিবার সকালে সম্পন্ন করা হয়। পরে তার লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “বিশ্বদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে শিক্ষার্থী মিমের জানাজা হয়। পরে বেলা ১২টার পর শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। পারিবারিক তত্ত্বাবধানে ঢাকায় লাশ দাফন করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের দেওয়া ১০ দফা দাবি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে আমরা অধিকাংশ দাবি আদায় করেছি। কিছু দাবির কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আমরা আশ্বস্ত করেছি অতি দ্রুত সব দাবি আমরা পূরণ করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতিটা দাবি আমারও দাবি। দুর্ঘটনার পর থেকেই দাবিগুলো পূরণে কাজ করছি। এর মধ্যে কিছু কাজ আমরা শেষ করেছি। বিআরটিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সড়কে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
“বাস চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ শুরু করছে। আশা করছি শীঘ্রই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই না আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে ঝরে যাক।”
এ জন্য যা দরকার তাই করবেন বলে জানান তিনি।
বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দায়ীদের আটকে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আমরা আমাদের পদক্ষেপ শুরু করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস চালককে আটক করা হবে।”
ঘটনার পর থেকে সড়কে গতিরোধক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত অন্যান্য সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম শেষ হবে। ট্রাফিক পুলিশও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আগের সংবাদ