সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে সারাদিন গণপিটুনি দিয়ে চুন ও বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানোর পর মারা যান হেলাল মিয়া।
Published : 26 Dec 2024, 04:08 PM
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে সারাদিন গণপিটুনি দিয়ে চুন ও বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানোর পর যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় এক ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে উপজেলার রাধানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ।
গ্রেপ্তার নুরুল ইসলাম ওরফে মুছা (৫১) মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওর্য়াডের সদস্য। তিনি গোয়াইনঘাটের ইসলামপুর দুবাগ এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।
ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।”
নিহত ব্যক্তির নাম হেলাল মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে।
মঙ্গলবার সকালে প্রতিদিনের মত জাফলংয়ে বালুর কাজে গিয়েছিলেন হেলাল। কিন্তু কাজ না পেয়ে ফেরার পথে তাকে গরু চোর সন্দেহে সারাদিন পিটিয়ে বালু-চুন মিশ্রিত এসিড পানি জোর করে খাওয়ানো হয়। আর তাতেই তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
উপজেলার রাধানগর গ্রামের এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
চার মিনিট সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে এক যুবক ও কিশোরকে ঘিরে মানুষের জটলা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। হেলালকে চিৎ করে মাটিতে ফেলে তার পিঠের উপর উঠেন লুঙ্গি ও সাদা গেঞ্জি পরা এক যুবক। তখন হেলালের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল।
এরপর ওই ব্যক্তি হেলালের পা দুটি উপর দিকে তুলে ধরেন; তখন তার পায়ের পাতায় লাঠি দিয়ে আরেকজন বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় হেলাল চিৎকার করছিলেন। একটু পরে ওই ব্যক্তি হেলালের মুখ মাটিতে রেখে তার ঘাড়ের উপর বসেন। তারপর আরেকজন তার পায়ের পাতা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকেন।
পাশেই পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছিল আরেক কিশোরকে। সে হাঁটতে পারছিল না। পরে ওই কিশোরকে দিয়েও হেলালকে পেটানো হয়। জড়ো হওয়া লোকজন গরু চুরি নিয়ে কথা বলছিলেন। সেখানে একটা লাল গরুও ছিল।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালেই হেলাল ও ওই কিশোরকে আটক করে গ্রামবাসী। পরে দিনভর তাদের ওপর নির্যাতন চলে।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি তোফায়েল বলেন, “গরু চোর সন্দেহে আটকের পর হেলালকে জনতা মারধর করে। এক পর্যায়ে আধা কেজি চুন পানিতে মিশানো হয়, তারপর এতে বালু দেওয়া হয়। সেই মিশ্রণ হেলালকে জোর করে খাওয়ানো হয়।
“বুধবার সকাল ৬টার দিকে হেলাল বমি করে; তখন তার নাক দিয়ে সাদা পানি বের হয়েছিল। বারবার বাথরুম হচ্ছিল। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, তখন তার পায়খানার সঙ্গে রক্তও গেছে। তারপর তিনি মারা গেছেন।”
এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর এক কিশোরকে সিলেটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এছাড়াও এই ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ।
গণপিটুনি দিয়ে চুন-বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানো হয় যুবককে
'বালুর কাজে এসেছিস, এখন বালু খা' বলে চুন-বালু মেশানো এসিড পানি খা